মুভিং অ্যাভারেজ: লাভজনক ট্রেডিং পদ্ধতি 2025
Updated: 29.04.2025
মুভিং অ্যাভারেজ: কীভাবে ইন্ডিকেটর ব্যবহার করবেন – মুভিং অ্যাভারেজ পদ্ধতি ও লাভজনক ট্রেডিং কৌশল (2025)
মুভিং অ্যাভারেজ হলো চার্টের টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসে সর্বাধিক জনপ্রিয় ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরগুলোর একটি। মূলত এই মুভিং অ্যাভারেজের ভিত্তিতেই হাজারো ভিন্ন ধরনের ইন্ডিকেটর, এক্সপার্ট অ্যাডভাইসার এবং বিপুল সংখ্যক ট্রেডিং কৌশল গড়ে উঠেছে।
মুভিং অ্যাভারেজ ইন্ডিকেটরটি ‘ল্যাগিং’ ইন্ডিকেটর হলেও, এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে বেশ কার্যকরভাবে লাভ অর্জন করা সম্ভব। এই প্রসঙ্গেই আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো এই আর্টিকলে।
মুভিং অ্যাভারেজ ক্যালকুলেশনের পদ্ধতি ছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেটিং আছে, যেমন:
মুভিং অ্যাভারেজ শিফট — এই প্যারামিটারটি মূলত মুভিং অ্যাভারেজ লাইনকে চার্টে সামনের দিকে বা পেছনের দিকে সরাতে ব্যবহৃত হয়। ডিফল্ট হিসেবে শিফট “০” থাকে—অর্থাৎ মুভিং অ্যাভারেজ লাইন বর্তমান ক্যান্ডেলের সাথেই মিলিয়ে চলে। যদি শিফট “২” বা “-২” করেন, তবে লাইনটি দুই ক্যান্ডেল সামনের দিকে বা পেছনের দিকে সরে যাবে: দেখা যাচ্ছে, “-২” শিফটে নীল মুভিং অ্যাভারেজ লাইন চার্টের পেছনে, আর “২” শিফটে লাল মুভিং অ্যাভারেজ লাইন দুই ক্যান্ডেল সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।
“apply to” বা কোন প্রাইস দিয়ে লাইন তৈরি হবে—ডিফল্ট হিসেবে “Close” (ক্যান্ডেল ক্লোজিং প্রাইস)। এছাড়াও নিম্নোক্ত ডেটা ব্যবহার করা যেতে পারে:
ট্রেন্ডিং মুভমেন্টে এ ধরনের জোন চমৎকার কাজ করে। চাইলে মাত্র একটিই মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ডায়নামিক ট্রেন্ড লাইনের নির্দেশ দেবে: উপরের উদাহরণে আমরা H4 (৪ ঘণ্টা) চার্টে “১৫” পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করেছি। দেখুন, ট্রেন্ডের কোথায় কোথায় মূল্য ফিরে এসেছে EMA লাইনে (প্রথমে রেজিস্ট্যান্স, পরে তা সাপোর্টে পরিণত হয়েছে, এবং এভাবেই বারবার পরিবর্তিত হয়েছে) – ট্রেডারদের জন্য ট্রেন্ড লাইন খুঁজে পেতে এটি দারুণ সহায়ক।
মূল্য অতি-বিক্রীত (ওভারসোল্ড) বা অতি-ক্রয়িত (ওভারবট) অবস্থায় থাকা মানে, বায়ার বা সেলাররা একই দামে লেনদেনে অনিচ্ছুক হয়ে যায়, ফলে সাধারণত পুলব্যাক দেখা যায়। চার্টে এটি বোঝা যায়:
আপট্রেন্ড চলাকালে ওভারবট অঞ্চলে এন্ট্রি না নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে, যাতে মূল্য মুভিং অ্যাভারেজের (এমএ) জোনে ফিরে আসে, তখনই সবচেয়ে ভালো এন্ট্রি পাওয়া যায়: খুব সহজ—আপট্রেন্ডে মূল্য যত নিচে পুলব্যাক করে, সেখান থেকে উপরে উঠার সময় এন্ট্রি নেওয়া তুলনামূলক নিরাপদ। অবশ্য দীর্ঘমেয়াদি পুলব্যাক বা সম্পূর্ণ রিভার্সালও হতে পারে, সুতরাং অন্য যেকোনো কৌশলের মতোই এখানে ১০০% নিশ্চয়তা নেই। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ভুলে গেলে চলবে না!
ডাউনট্রেন্ডে ঠিক উল্টো—ওভারসোল্ড অঞ্চলে এন্ট্রি নেওয়া ঠিক নয়; বরং EMA “১০” ও “২০” লাইনের তৈরি রেজিস্ট্যান্স জোন থেকে সেল এন্ট্রি খোঁজা উচিত: কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ট্রেন্ড এতটাই শক্তিশালী হয় যে, মূল্য দীর্ঘসময় EMA লাইনে না ফিরে ক্রমাগত উপরে বা নিচে এগিয়ে যায়। তখন সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত মূল্য সেই লেভেলগুলো ভেঙে পরবর্তীতে সেই স্থানকে নতুন সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স হিসেবে ব্যবহার করে—সেটাই শক্তিশালী ট্রেন্ড মুভমেন্টে এন্ট্রি নেওয়ার আদর্শ সময়:
কারণ, ইন্ডিকেটরটি খুবই নমনীয়। আপনি কী পেতে চান তার ওপর নির্ভর করে পিরিয়ড ঠিক করবেন:
যদি এক ঘণ্টা বা তার কম সময়ের জন্য (স্বল্পমেয়াদি) ট্রেড করেন, তাহলে “ফাস্ট” মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করুন:
ফাস্ট মুভিং অ্যাভারেজের সমস্যা হলো, এরা অনেক “নয়েজ” তৈরি করে—অর্থাৎ ছোটোখাটো ও ফালতু সিগনাল বেশি দেয়। তবে স্বল্পমেয়াদী ট্রেডের জন্য দ্রুত সিগনাল পেতে এগুলোই দরকারি: পিরিয়ড যত ছোট হবে, নয়েজও তত বেশি মিলবে।
“স্লো” মুভিং অ্যাভারেজগুলো (সাধারণত পিরিয়ড ৫০-এর বেশি) তুলনামূলক কম নয়েজ দেখায় এবং বৃহত্তর ট্রেন্ড বা গ্লোবাল মুভমেন্ট বোঝাতে সাহায্য করে: তবে স্লো মুভিং অ্যাভারেজেও অসুবিধা আছে—যদি কোনো ট্রেন্ড দ্রুত উল্টো দিকে মোড় নেয়, ইন্ডিকেটরটি সেটি ধরতে সময় নেয়।
ফলে সাধারণত ট্রেডাররা ফাস্ট ও স্লো মুভিং অ্যাভারেজ একসঙ্গে ব্যবহার করেন:
সাইডওয়ের শেষ চিহ্নিত করতে মূলত হাই ও লোর প্যাটার্ন দেখা জরুরি। ডাউনট্রেন্ড শুরু হলে নতুন লো আগের লো-এর নিচে নামবে, আপট্রেন্ড শুরু হলে নতুন হাই আগের হাই-এর ওপরে উঠবে।
তবে মুভিং অ্যাভারেজে সহায়ক একটি বিষয় হতে পারে—ট্রেন্ড পুলব্যাক যদি মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ভেদ না করে ফিরে আসে, তবে তা নতুন ট্রেন্ডের শক্তি নির্দেশ করে:
কৌশলের সারসংক্ষেপ:
সাধারণত নিচের পিরিয়ডগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়:
আসলে “Envelopes” মূলত কেন্দ্রে থাকা একটি মুভিং অ্যাভারেজ লাইনের ওপরে এবং নিচে নির্দিষ্ট শতাংশ (Deviation) দূরত্বে দুটি লাইন এঁকে দেয়। এটি “Bollinger Bands”-এর মতো নয়; কারণ এটির গাণিতিক ভিত্তি ভিন্ন। কৌশলটি হলো, এনভেলপসের দুটি বাউন্ডারি ওভারবট ও ওভারসোল্ড অঞ্চলের মতো কাজ করতে পারে। মূল্য যখন উপরের বাউন্ডারিতে পৌঁছায়, তখন নিচের দিকে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে; আর নিচের বাউন্ডারিতে গেলে ওপরের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে: এনভেলপসকে “Bollinger Bands” এর সঙ্গেও ব্যবহার করা যায়। যদি কোনো ক্যান্ডেল Bollinger Bands-এর বাইরে ওপেন হয় এবং একেবারে এনভেলপসের সীমানায় অবস্থান করে, তাহলে প্রায়ই সেখান থেকে মূল্য রিভার্স করে: উল্লেখ্য, এখানে Bollinger Bands ও Envelopes–এর পিরিয়ড একই হতে হবে (উদাহরণে “১৪” পিরিয়ড)।
EMA “২০০” দিয়ে ট্রেন্ড বোঝা খুব সহজ:
এই দীর্ঘ পিরিয়ডের মুভিং অ্যাভারেজ (যেমন “২০০”) সাধারণত স্পষ্ট বলে দেয়, ট্রেন্ড এখনো সচল কি না। আপট্রেন্ডে থাকলে শুধু বাই এন্ট্রি, ডাউনট্রেন্ডে থাকলে শুধু সেল এন্ট্রি—এটা মেনে চলতে পারলে অনেক ঝামেলা এড়ানো যায়। এছাড়া অন্তর্বর্তী পুলব্যাকে এন্ট্রি নেওয়ার আগে আগের হাই বা লো আপডেট হয়েছে কি না, দেখে নেওয়া উচিত।
সাধারণত ধীরগতির মুভিং অ্যাভারেজ দিয়ে ট্রেন্ড ভেদ না হওয়া পর্যন্ত, ট্রেন্ড অক্ষত থাকে। একারণে যারা সুইং ট্রেড বা দীর্ঘমেয়াদি ট্রেড করেন, তাদের কাছে এটি খুবই উপকারী একটি গাইড।
এছাড়াও, মুভিং অ্যাভারেজের নানা ধরন (SMA, EMA, LWMA ইত্যাদি) এবং পিরিয়ড সমন্বয় বিভিন্নভাবে প্রচুর ট্রেডিং সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। ট্রেডিং রোবটসহ (এটোমেটেড সিস্টেম) প্রায় সব ইন্ডিকেটর-ভিত্তিক স্ট্র্যাটেজির প্রধান উপাদান হিসেবে মুভিং অ্যাভারেজ দেখা যায়।
ট্রেডারদের কাছে মুভিং অ্যাভারেজ হলো বাজার বুঝে সঠিক এন্ট্রি নেওয়ার একটি সহজ উপায়। বাজার বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রক্রিয়া সহজতর করে তোলে বলেই এটি এত জনপ্রিয়। সুতরাং হাতের কাছে যদি এমন একটি টুল থাকে, যা বাজার বোঝা ও ট্রেডিংকে সহজ করতে পারে, তবে সেটি নিশ্চয়ই ব্যবহার করা উচিত!
মুভিং অ্যাভারেজ ইন্ডিকেটরটি ‘ল্যাগিং’ ইন্ডিকেটর হলেও, এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে বেশ কার্যকরভাবে লাভ অর্জন করা সম্ভব। এই প্রসঙ্গেই আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো এই আর্টিকলে।
সূচিপত্র
- মুভিং অ্যাভারেজ তৈরি ও হিসাবের পদ্ধতি
- মুভিং অ্যাভারেজ ইন্ডিকেটরের গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার
- মুভিং অ্যাভারেজ ট্রেন্ড লাইন হিসেবে বা মূল্যের গড়ে ফিরতি প্রবণতা
- মুভিং অ্যাভারেজ: ওভারবট ও ওভারসোল্ড অ্যাসেট - ট্রেডারদের ভুল
- মুভিং অ্যাভারেজ দিয়ে মোমেন্টাম নির্ণয়
- মুভিং অ্যাভারেজ: ব্যবহারিক প্রয়োগ
- মুভিং অ্যাভারেজের পিরিয়ড নিয়ে বিভ্রান্তি নেই
- মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহারে সঠিক টাইম ফ্রেম নির্বাচন
- ফাস্ট ও স্লো মুভিং অ্যাভারেজ
- মুভিং অ্যাভারেজ দ্বারা সাইডওয়ে শনাক্তকরণ
- মুভিং অ্যাভারেজ (Moving Average) দিয়ে জনপ্রিয় বাইনারি অপশন ট্রেডিং কৌশল
- “তিনটি মুভিং অ্যাভারেজ” ট্রেন্ড ট্রেডিং কৌশল
- “মূল্য মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ক্রস করা” কৌশল
- পিরিয়ড “৫০” মুভিং অ্যাভারেজ – দীর্ঘমেয়াদি ট্রেন্ড ট্রেডিং কৌশল
- পিরিয়ড “৫০” মুভিং অ্যাভারেজ – স্বল্পমেয়াদি ট্রেডিং কৌশল
- দুটি মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ইন্টারসেকশনের কৌশল
- তিনটি মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ইন্টারসেকশনের কৌশল
- মুভিং অ্যাভারেজ এনভেলপ – মুভিং অ্যাভারেজের প্রাইস চ্যানেল
- “৫০” ও “২০০” পিরিয়ড মুভিং অ্যাভারেজ ইন্টারসেকশন
- “১০” ও “৩০” পিরিয়ড মুভিং অ্যাভারেজ ইন্টারসেকশন
- ধীরগতির মুভিং অ্যাভারেজ দ্বারা মার্কেট ফেজ নির্ধারণ
- মুভিং অ্যাভারেজ: চূড়ান্ত কথা
মুভিং অ্যাভারেজ তৈরি ও হিসাবের পদ্ধতি
প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে কীভাবে মূল্যের চার্টে মুভিং অ্যাভারেজ গঠন করা হয়। মুভিং অ্যাভারেজ ইন্ডিকেটর তৈরি করার কয়েকটি মৌলিক পদ্ধতি রয়েছে:- সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ
- এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ
- লিনিয়ার ওয়েটেড মুভিং অ্যাভারেজ
সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ
সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ (SMA) কীভাবে তৈরি হয় বোঝা বেশ সহজ। সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে:- পিরিয়ড “১৪” — অর্থাৎ শেষ ১৪টি ক্যান্ডেলের ডেটা নিয়ে হিসাব করা হয়
- ক্যালকুলেশনের জন্য “Close” — ক্যান্ডেল ক্লোজিং প্রাইস নেওয়া হয়
- Simple Moving Average = SUM(CLOSE(i), N) / N
- SUM – যোগফল
- CLOSE(i) – নির্দিষ্ট ক্যান্ডেলের ক্লোজিং প্রাইস
- N – ক্যান্ডেলের সংখ্যা (ইন্ডিকেটরের পিরিয়ড)
এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ
এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ (EMA) আসলে সাধারণ মুভিং অ্যাভারেজের তুলনায় বেশি মসৃণ। এর পেছনে মূল কারণ হলো, এর হিসাবের সূত্রে সাম্প্রতিক মূল্যের ওপর কিছুটা ‘ওজন’ (Weight) বেশি দেওয়া হয়। গাণিতিক সূত্রটি এরকম:- Exponential Moving Average = (CLOSE(i)*P) + (Exponential Moving Average(i-1) * (1-P))
- P – সাম্প্রতিক মূল্যের ওজনের অনুপাত
- CLOSE(i) – নির্দিষ্ট ক্যান্ডেলের ক্লোজিং প্রাইস
- Exponential Moving Average(i-1) – আগের পিরিয়ডের EMA মান
লিনিয়ার ওয়েটেড মুভিং অ্যাভারেজ
লিনিয়ার ওয়েটেড মুভিং অ্যাভারেজ (LWMA বা WMA নামেও পরিচিত) আরেকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এখানে সাম্প্রতিক ক্যান্ডেলগুলোকে বেশি ওজন (Weight) দেওয়া হয় এবং পূর্বের ক্যান্ডেলগুলোকে তুলনামূলক কম ওজন দেওয়া হয়। হিসাবের সময় প্রতিটি উপাদানকে নির্দিষ্ট ওজনের গুণ করে যোগফল বের করা হয়। এর সূত্র হলো:- Linear Weighted Moving Average = SUM(CLOSE(i)*i, N) / SUM(i, N)
- SUM - যোগফল
- CLOSE(i) – নির্দিষ্ট ক্যান্ডেলের ক্লোজিং প্রাইস
- SUM(i, N) – ওজনের যোগফল
- N – স্মুদিং পিরিয়ড
মুভিং অ্যাভারেজ ইন্ডিকেটরের গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার
ট্রেডিং কৌশলগুলোতে মুভিং অ্যাভারেজ বহুল ব্যবহৃত হয়। এর প্রধান কারণ হলো, মুভিং অ্যাভারেজ ইন্ডিকেটরের সেটিং অত্যন্ত নমনীয়। সঠিকভাবে ইন্ডিকেটর কনফিগার করতে হলে একজন ট্রেডারকে বুঝতে হবে, ইন্ডিকেটর কীভাবে কাজ করে এবং আউটপুট হিসেবে কী তথ্য প্রয়োজন।মুভিং অ্যাভারেজ ক্যালকুলেশনের পদ্ধতি ছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেটিং আছে, যেমন:
- পিরিয়ড (Period)
- শিফট (Shift)
- “apply to” বা কোন প্রাইস ডেটা হিসাব করা হবে
মুভিং অ্যাভারেজ শিফট — এই প্যারামিটারটি মূলত মুভিং অ্যাভারেজ লাইনকে চার্টে সামনের দিকে বা পেছনের দিকে সরাতে ব্যবহৃত হয়। ডিফল্ট হিসেবে শিফট “০” থাকে—অর্থাৎ মুভিং অ্যাভারেজ লাইন বর্তমান ক্যান্ডেলের সাথেই মিলিয়ে চলে। যদি শিফট “২” বা “-২” করেন, তবে লাইনটি দুই ক্যান্ডেল সামনের দিকে বা পেছনের দিকে সরে যাবে: দেখা যাচ্ছে, “-২” শিফটে নীল মুভিং অ্যাভারেজ লাইন চার্টের পেছনে, আর “২” শিফটে লাল মুভিং অ্যাভারেজ লাইন দুই ক্যান্ডেল সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।
“apply to” বা কোন প্রাইস দিয়ে লাইন তৈরি হবে—ডিফল্ট হিসেবে “Close” (ক্যান্ডেল ক্লোজিং প্রাইস)। এছাড়াও নিম্নোক্ত ডেটা ব্যবহার করা যেতে পারে:
- Close – ক্যান্ডেল ক্লোজিং প্রাইস
- Open – ক্যান্ডেল ওপেনিং প্রাইস
- High – ক্যান্ডেলের সর্বোচ্চ প্রাইস
- Low – ক্যান্ডেলের সর্বনিম্ন প্রাইস
- Median Price (HL/2) – গড় প্রাইস (সর্বোচ্চ * সর্বনিম্ন / ২)
- Typical Price (HLC/3) – টিপিক্যাল প্রাইস (সর্বোচ্চ * সর্বনিম্ন * ক্লোজিং প্রাইস / ৩)
- Weighted Close (HLCC/4) – ওজনযুক্ত প্রাইস (সর্বোচ্চ * সর্বনিম্ন * ক্লোজিং প্রাইস * ২ / ৪)
মুভিং অ্যাভারেজ ট্রেন্ড লাইন হিসেবে বা মূল্যের গড়ে ফিরতি প্রবণতা
আগের আর্টিকেলগুলো থেকে আপনি ইতিমধ্যে জানেন যে, মূল্য সবসময় ঢেউয়ের মতো চলাচল করে। প্রতিটি আপট্রেন্ডের মধ্যে নিচের দিকে পুলব্যাক থাকে, আবার ডাউনট্রেন্ডের মধ্যেও ঊর্ধ্বমুখী পুলব্যাক ঘটে। মূল্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল অনুযায়ী চলে, আবার ট্রেন্ড লাইন সাপোর্টকেও মূল্য শ্রদ্ধা করে। একে যদি আনুভূমিকভাবে চিত্রিত করা হয়, দেখা যাবে এমন একটি ছবি: কিন্তু যেকোনো সাপ্লাই ও ডিমান্ড লেভেলই ট্রেডারদের আগ্রহের জায়গা। এখানে মুভিং অ্যাভারেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চার্টে “১০” পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ এবং “২০” পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ যোগ করলে, দুই লাইন মিলে ডায়নামিক ট্রেন্ড সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স জোনের মতো কাজ করবে: মূল্য গড় মূল্যে (support বা resistance জোনে) ফিরে আসার প্রবণতা রাখে। খেয়াল করুন, ট্রেন্ড যত শক্তিশালী, EMA লাইনদুটিও তত দূরে সরে যায়—ফলে সাপোর্ট জোন এবং রেজিস্ট্যান্স জোন বড় হয়।ট্রেন্ডিং মুভমেন্টে এ ধরনের জোন চমৎকার কাজ করে। চাইলে মাত্র একটিই মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ডায়নামিক ট্রেন্ড লাইনের নির্দেশ দেবে: উপরের উদাহরণে আমরা H4 (৪ ঘণ্টা) চার্টে “১৫” পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করেছি। দেখুন, ট্রেন্ডের কোথায় কোথায় মূল্য ফিরে এসেছে EMA লাইনে (প্রথমে রেজিস্ট্যান্স, পরে তা সাপোর্টে পরিণত হয়েছে, এবং এভাবেই বারবার পরিবর্তিত হয়েছে) – ট্রেডারদের জন্য ট্রেন্ড লাইন খুঁজে পেতে এটি দারুণ সহায়ক।
মুভিং অ্যাভারেজ: ওভারবট ও ওভারসোল্ড অ্যাসেট - ট্রেডারদের ভুল
অনেক সময় ট্রেডাররা মূল্যের শক্তিশালী মুভমেন্ট দেখেই ট্রেন্ডের সঙ্গে এন্ট্রি নিয়ে নেন। প্রথমদৃষ্টিতে হয়তো ঠিকই মনে হয়—“ট্রেন্ড চলছে, ঢুকে পড়ি!” কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এই প্রবল প্রবাহের পরে (যাকে আমরা প্রাইস ইমপালস বলি), প্রায়ই মূল্যে পুলব্যাক হয় মুভিং অ্যাভারেজের দিকে।মূল্য অতি-বিক্রীত (ওভারসোল্ড) বা অতি-ক্রয়িত (ওভারবট) অবস্থায় থাকা মানে, বায়ার বা সেলাররা একই দামে লেনদেনে অনিচ্ছুক হয়ে যায়, ফলে সাধারণত পুলব্যাক দেখা যায়। চার্টে এটি বোঝা যায়:
- আনুভূমিক সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল
- ক্যান্ডেলস্টিক গঠন
- Doji ক্যান্ডেল (দীর্ঘ শেডো ও ছোট শরীরযুক্ত ক্যান্ডেল)
আপট্রেন্ড চলাকালে ওভারবট অঞ্চলে এন্ট্রি না নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে, যাতে মূল্য মুভিং অ্যাভারেজের (এমএ) জোনে ফিরে আসে, তখনই সবচেয়ে ভালো এন্ট্রি পাওয়া যায়: খুব সহজ—আপট্রেন্ডে মূল্য যত নিচে পুলব্যাক করে, সেখান থেকে উপরে উঠার সময় এন্ট্রি নেওয়া তুলনামূলক নিরাপদ। অবশ্য দীর্ঘমেয়াদি পুলব্যাক বা সম্পূর্ণ রিভার্সালও হতে পারে, সুতরাং অন্য যেকোনো কৌশলের মতোই এখানে ১০০% নিশ্চয়তা নেই। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ভুলে গেলে চলবে না!
ডাউনট্রেন্ডে ঠিক উল্টো—ওভারসোল্ড অঞ্চলে এন্ট্রি নেওয়া ঠিক নয়; বরং EMA “১০” ও “২০” লাইনের তৈরি রেজিস্ট্যান্স জোন থেকে সেল এন্ট্রি খোঁজা উচিত: কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ট্রেন্ড এতটাই শক্তিশালী হয় যে, মূল্য দীর্ঘসময় EMA লাইনে না ফিরে ক্রমাগত উপরে বা নিচে এগিয়ে যায়। তখন সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত মূল্য সেই লেভেলগুলো ভেঙে পরবর্তীতে সেই স্থানকে নতুন সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স হিসেবে ব্যবহার করে—সেটাই শক্তিশালী ট্রেন্ড মুভমেন্টে এন্ট্রি নেওয়ার আদর্শ সময়:
মুভিং অ্যাভারেজ দিয়ে মোমেন্টাম নির্ণয়
মোমেন্টাম হলো মূল্যের পরিবর্তনের গতি। সহজ ভাষায়, মোমেন্টাম ট্রেন্ডের শক্তি প্রকাশ করে। উদাহরণ হিসেবে, তিনটি মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করে মোমেন্টাম নির্ণয় করা যেতে পারে:- সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ (SMA) পিরিয়ড “৫০”
- সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ (SMA) পিরিয়ড “১০০”
- সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ (SMA) পিরিয়ড “২০০”
- SMA (৫০) মূল্যের সবচেয়ে কাছে থাকে
- SMA (১০০) থাকে SMA (৫০) ও SMA (২০০)-এর মাঝামাঝি
- SMA (২০০) মূল্যের সবচেয়ে দূরে থাকে
মুভিং অ্যাভারেজ ডায়নামিক সাপোর্ট লেভেল হিসেবে
যখন মুভিং অ্যাভারেজ লাইন মূল্যের নিচে থাকে, তখন এটি একটি ডায়নামিক সাপোর্ট লেভেল হিসেবে কাজ করে। তবে পিরিয়ড যত ছোট, সাপোর্ট তত দুর্বল; পিরিয়ড যত বড়, সাপোর্ট তত শক্তিশালী: সাধারণত গোল সংখ্যা বা রাউন্ড ফিগার (যেমন ১০, ৫০, ১০০, ২০০ ইত্যাদি) পিরিয়ড হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়। অনেক ট্রেডার টাইম ফ্রেম হিসেবেও পিরিয়ড নির্ধারণ করেন (যেমন, M1 চার্টের জন্য “৬০” পিরিয়ড—৬০ মিনিট মানে এক ঘণ্টা)।মুভিং অ্যাভারেজ ডায়নামিক রেজিস্ট্যান্স লেভেল হিসেবে
যেভাবে আনুভূমিক সাপোর্ট ভেঙে গেলে তা রেজিস্ট্যান্সে পরিণত হয়, একইভাবে মুভিং অ্যাভারেজ লাইনওমূল্যের ওপরে থাকলে রেজিস্ট্যান্স, নিচে থাকলে সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে। সহজভাবে মনে রাখুন, মূল্যের ওপরে থাকলে রেজিস্ট্যান্স, নিচে থাকলে সাপোর্ট: মনে রাখতে হবে, মুভিং অ্যাভারেজ সেটিং টাইম ফ্রেম ও নির্দিষ্ট অ্যাসেট অনুযায়ী বদলাতে হতে পারে।মুভিং অ্যাভারেজ: ব্যবহারিক প্রয়োগ
মুভিং অ্যাভারেজ নিয়ে বিন্দু থেকে বিন্দু বিশ্লেষণ করলে শেষ হবে না, কারণ এর ওপর ভিত্তি করে হাজার হাজার ট্রেডিং কৌশল ও টিপস রয়েছে। তবে কয়েকটি সার্বজনীন দিক বা পরামর্শ রয়েছে, যা আপনার জন্য মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহারে সহায়ক হতে পারে।মুভিং অ্যাভারেজের পিরিয়ড নিয়ে বিভ্রান্তি নেই
আপনি দেখবেন, বিভিন্ন ট্রেডিং কৌশলে মুভিং অ্যাভারেজের সেটিং বা পিরিয়ড ভিন্ন ভিন্ন রকম। কেন এরকম হয়?কারণ, ইন্ডিকেটরটি খুবই নমনীয়। আপনি কী পেতে চান তার ওপর নির্ভর করে পিরিয়ড ঠিক করবেন:
- দ্রুত সিগনাল পেতে চাইলে ছোট পিরিয়ড
- অপসৃত বা মসৃণ ডেটা পেতে চাইলে বড় পিরিয়ড
- শক্তিশালী সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স লেভেল
- ট্রেন্ডের শুরু বা শেষ চিহ্নিতকরণ
মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহারে সঠিক টাইম ফ্রেম নির্বাচন
মুভিং অ্যাভারেজ ইন্ডিকেটরের কার্যকারিতা বড় অংশে নির্ভর করে কোন টাইম ফ্রেমে ব্যবহার করছেন। যেমন, মিনিট চার্ট (M1)-এ “১০০” বা “২০০” পিরিয়ডের মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করে খুব একটা লাভ নেই। আবার দীর্ঘমেয়াদি ট্রেডিংয়ের জন্য ছোট পিরিয়ডের “ফাস্ট” EMA/SMA ততটা কার্যকর নয়।যদি এক ঘণ্টা বা তার কম সময়ের জন্য (স্বল্পমেয়াদি) ট্রেড করেন, তাহলে “ফাস্ট” মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করুন:
- ৫ থেকে ৫০ পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ (EMA)
- সাধারণত অন্তত দুটি ভিন্ন পিরিয়ডের EMA একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়
ফাস্ট ও স্লো মুভিং অ্যাভারেজ
যে মুভিং অ্যাভারেজগুলো বাজারের ছোটোখাটো পরিবর্তনে দ্রুত সাড়া দেয়, তাদের “ফাস্ট মুভিং অ্যাভারেজ” বলা হয়। সাধারণত ১ থেকে ৫০ পিরিয়ডের EMA/SMA–কে ফাস্ট বলা হয় (বিভিন্ন ট্রেডারের মত একটু ভিন্ন হতে পারে)।ফাস্ট মুভিং অ্যাভারেজের সমস্যা হলো, এরা অনেক “নয়েজ” তৈরি করে—অর্থাৎ ছোটোখাটো ও ফালতু সিগনাল বেশি দেয়। তবে স্বল্পমেয়াদী ট্রেডের জন্য দ্রুত সিগনাল পেতে এগুলোই দরকারি: পিরিয়ড যত ছোট হবে, নয়েজও তত বেশি মিলবে।
“স্লো” মুভিং অ্যাভারেজগুলো (সাধারণত পিরিয়ড ৫০-এর বেশি) তুলনামূলক কম নয়েজ দেখায় এবং বৃহত্তর ট্রেন্ড বা গ্লোবাল মুভমেন্ট বোঝাতে সাহায্য করে: তবে স্লো মুভিং অ্যাভারেজেও অসুবিধা আছে—যদি কোনো ট্রেন্ড দ্রুত উল্টো দিকে মোড় নেয়, ইন্ডিকেটরটি সেটি ধরতে সময় নেয়।
ফলে সাধারণত ট্রেডাররা ফাস্ট ও স্লো মুভিং অ্যাভারেজ একসঙ্গে ব্যবহার করেন:
- স্লো মুভিং অ্যাভারেজ—বড় ট্রেন্ড বা গ্লোবাল দিকনির্দেশনা পেতে
- ফাস্ট মুভিং অ্যাভারেজ—ট্রেন্ডের ভেতরে দ্রুত এন্ট্রি পয়েন্ট পেতে
মুভিং অ্যাভারেজ দ্বারা সাইডওয়ে শনাক্তকরণ
অনেকে মনে করেন, সাইডওয়ে বা ফ্ল্যাট মার্কেট যাচাই করতে মুভিং অ্যাভারেজ সহজ একটি উপায়। দেখা গেল লাইনগুলো ঘন ঘন ক্রস করছে, মূল্য আনুভূমিকভাবে চলছে—এটাই ফ্ল্যাট। তবে সমস্যা হলো, কখন ফ্ল্যাট শেষ হয়ে ট্রেন্ড শুরু হবে, তা শুধুমাত্র মুভিং অ্যাভারেজ দেখে নির্ণয় কঠিন।সাইডওয়ের শেষ চিহ্নিত করতে মূলত হাই ও লোর প্যাটার্ন দেখা জরুরি। ডাউনট্রেন্ড শুরু হলে নতুন লো আগের লো-এর নিচে নামবে, আপট্রেন্ড শুরু হলে নতুন হাই আগের হাই-এর ওপরে উঠবে।
তবে মুভিং অ্যাভারেজে সহায়ক একটি বিষয় হতে পারে—ট্রেন্ড পুলব্যাক যদি মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ভেদ না করে ফিরে আসে, তবে তা নতুন ট্রেন্ডের শক্তি নির্দেশ করে:
মুভিং অ্যাভারেজ (Moving Average) দিয়ে জনপ্রিয় বাইনারি অপশন ট্রেডিং কৌশল
মুভিং অ্যাভারেজ ছাড়া কীভাবে ট্রেডিং কৌশল হবে?! এখানে কয়েকটি বহুল প্রচলিত কৌশল সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:“তিনটি মুভিং অ্যাভারেজ” ট্রেন্ড ট্রেডিং কৌশল
এখানে আমাদের দরকার তিনটি মুভিং অ্যাভারেজ লাইন:- “২০০” পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ—গ্লোবাল ট্রেন্ড নির্ণয়ের জন্য (স্লো এমএ)
- “৫০” পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ
- “২০” পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ
- EMA “২০০” লাইন দিয়ে গ্লোবাল ট্রেন্ড নির্ধারণ: মূল্য লাইনটির ওপরে থাকলে আপট্রেন্ড; নিচে থাকলে ডাউনট্রেন্ড। আপট্রেন্ড হলে শুধু বাই এন্ট্রি বা ডাউনট্রেন্ড হলে শুধু সেল এন্ট্রি খুঁজবেন।
- EMA “২০” ও EMA “৫০” এর ইন্টারসেকশন লক্ষ্য করুন—“২০” পিরিয়ডের লাইন মূল্যকে সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবে।
- ট্রেন্ড নিশ্চিত করতে অন্তত দুইবার মূল্য EMA “২০” বা EMA “৫০” থেকে রিবাউন্ড করেছে কি না, সেটা দেখতে হবে।
- পরবর্তীতে তৃতীয় বা পরের বার যখন মূল্য EMA লাইন স্পর্শ করে ফিরে আসবে, তখন ট্রেন্ডের দিকে ট্রেড এন্ট্রি নিন।
“মূল্য মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ক্রস করা” কৌশল
এই কৌশলে আমরা “২০” পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ (EMA) ব্যবহার করবো। মুল ধারণা হলো, বড় মাপের ট্রেন্ডের পর সাধারণত মূল্যে সাইডওয়ে বা কনসলিডেশন ফেজ দেখা যায়। আমরা সেই সাইডওয়ে থেকেই ট্রেড বের করার চেষ্টা করবো।- প্রথমে মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ব্যবহার করে ট্রেন্ড খুঁজুন; অন্তত একবার মূল্য EMA লাইনের কাছ থেকে ফিরে আসতে হবে (পুলব্যাকের প্রমাণ)।
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস করে দেখুন, মূল্য কি নতুন হাই (আপট্রেন্ডে) বা লো (ডাউনট্রেন্ডে) তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে?
- শেষ কয়েকটি হাই ও লো দিয়ে সাইডওয়ের (আনুভূমিক বাউন্ডারি) গণ্ডি তৈরি করুন।
- সাইডওয়ের ওপর ও নিচের সীমা থেকে মূল্যে প্রত্যাবর্তনের (পুলব্যাকের) সময় ট্রেড নিন।
পিরিয়ড “৫০” মুভিং অ্যাভারেজ – দীর্ঘমেয়াদি ট্রেন্ড ট্রেডিং কৌশল
এই কৌশলের জন্য আমাদের লাগবে একটি “৫০” পিরিয়ডের সিম্পল বা এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ (SMA বা EMA) এবং টাইম ফ্রেম H1 বা তারও বেশি।কৌশলের সারসংক্ষেপ:
- কমপক্ষে একবার মূল্য মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ছুঁয়ে পুলব্যাক থেকে নতুন লো বা হাই তৈরি করেছে কি না, সেটি দেখুন।
- ট্রেন্ড চলাকালীন, যখনই মূল্য EMA/SMA লাইনে ফিরে আসবে (পুলব্যাক হবে), তখনই ট্রেন্ডের দিকে এন্ট্রি খুঁজবেন।
- যখন দেখবেন নতুন লো বা হাই আর তৈরি হচ্ছে না, ধরে নেবেন ট্রেন্ড শেষ। তখন আর ট্রেড নেওয়া যাবে না।
পিরিয়ড “৫০” মুভিং অ্যাভারেজ – স্বল্পমেয়াদি ট্রেডিং কৌশল
এবার চলুন স্বল্পমেয়াদে “৫০” পিরিয়ডের মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করি।- “৫০” পিরিয়ডের সিম্পল অথবা এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ
- মূল্য এই লাইনকে কেন্দ্র করে কোন দিকে ট্রেন্ড করছে তা নির্ণয়
- অন্তত একবার পুলব্যাক থেকে নতুন হাই/লো তৈরি হওয়ার পর ট্রেন্ডে এন্ট্রি নেওয়ার সুযোগ খুঁজুন
- পুলব্যাকের শীর্ষ (আপট্রেন্ডে) বা তলার (ডাউনট্রেন্ডে) আনুভূমিক লেভেল ভাঙলে এন্ট্রি নিন
দুটি মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ইন্টারসেকশনের কৌশল
দুটি মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ব্যবহার করে ক্রসওভারের ওপর ভিত্তি করে অনেকেই সহজ অথচ কার্যকর কৌশল অনুসরণ করেন। দুটি লাইন ইন্টারসেক্ট করলে বোঝা যায়, হয় ট্রেন্ড শুরু হচ্ছে বা শেষ হচ্ছে।সাধারণত নিচের পিরিয়ডগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়:
- ৪ ও ৮ (বা ৯)
- ৬ ও ২৪
- ১৫ ও ৫০
- ২০ ও ৬০
- ৩০ ও ১০০
তিনটি মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ইন্টারসেকশনের কৌশল
তিনটি মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করেও অনেকে কার্যকর সেটআপ তৈরি করেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় পিরিয়ড কম্বিনেশন:- ৪, ৮, ১৮
- ৫, ১০, ২০
- ৮, ১৩, ২১
মুভিং অ্যাভারেজ এনভেলপ – মুভিং অ্যাভারেজের প্রাইস চ্যানেল
এটি আরেকটি মজার পদ্ধতি। “Envelopes” নামের ইন্ডিকেটরটি ব্যবহার করে মুভিং অ্যাভারেজের চারপাশে প্রাইস চ্যানেল তৈরি করা হয়।আসলে “Envelopes” মূলত কেন্দ্রে থাকা একটি মুভিং অ্যাভারেজ লাইনের ওপরে এবং নিচে নির্দিষ্ট শতাংশ (Deviation) দূরত্বে দুটি লাইন এঁকে দেয়। এটি “Bollinger Bands”-এর মতো নয়; কারণ এটির গাণিতিক ভিত্তি ভিন্ন। কৌশলটি হলো, এনভেলপসের দুটি বাউন্ডারি ওভারবট ও ওভারসোল্ড অঞ্চলের মতো কাজ করতে পারে। মূল্য যখন উপরের বাউন্ডারিতে পৌঁছায়, তখন নিচের দিকে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে; আর নিচের বাউন্ডারিতে গেলে ওপরের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে: এনভেলপসকে “Bollinger Bands” এর সঙ্গেও ব্যবহার করা যায়। যদি কোনো ক্যান্ডেল Bollinger Bands-এর বাইরে ওপেন হয় এবং একেবারে এনভেলপসের সীমানায় অবস্থান করে, তাহলে প্রায়ই সেখান থেকে মূল্য রিভার্স করে: উল্লেখ্য, এখানে Bollinger Bands ও Envelopes–এর পিরিয়ড একই হতে হবে (উদাহরণে “১৪” পিরিয়ড)।
“৫০” ও “২০০” পিরিয়ড মুভিং অ্যাভারেজ ইন্টারসেকশন
এ কৌশলে দুটি সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ (SMA) “৫০” ও “২০০” পিরিয়ডের ব্যবহার করা হয়। এদের ইন্টারসেকশন সাধারণত শক্তিশালী ট্রেন্ড পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়: ফরেক্স ট্রেডারদের মধ্যে এটি খুবই জনপ্রিয় কৌশল। বাইনারি অপশনেও আপনি এর সুবিধা নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ট্রেন্ড ভালোভাবে শনাক্ত করে পরে অন্য যেকোনো কনফার্মেশনের মাধ্যমে এন্ট্রি নেওয়া যেতে পারে।“১০” ও “৩০” পিরিয়ড মুভিং অ্যাভারেজ ইন্টারসেকশন
এটি আগেরটির তুলনায় দ্রুতগতি সম্পন্ন এক মুভিং অ্যাভারেজ ইন্টারসেকশন পদ্ধতি। মূল ভিত্তি এক—লাইন ক্রস করলে নতুন ট্রেন্ডের সম্ভাবনা থাকে। তবে “১০” ও “৩০” পিরিয়ড অপেক্ষাকৃত ছোট, তাই দিনের মধ্যেই অনেকগুলো সিগনাল পাওয়া যেতে পারে: যদি স্পষ্ট ওয়েভ-লাইক মুভমেন্ট দেখতে পান, তাহলে কেবলমাত্র বর্তমান ট্রেন্ডের দিকের ক্রসওভারগুলোতে এন্ট্রি নিলে কার্যকারিতা বাড়বে।ধীরগতির মুভিং অ্যাভারেজ দ্বারা মার্কেট ফেজ নির্ধারণ
একটি বড় পিরিয়ডের মুভিং অ্যাভারেজ অনেক কিছু জানাতে পারে। যেমন, মার্কেট বর্তমানে কোন ফেজে আছে? উদাহরণ হিসেবে আমরা “২০০” পিরিয়ডের এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ (EMA) ব্যবহার করব। বাজার সাধারণত দুই অবস্থায় থাকে—ট্রেন্ডিং অথবা সাইডওয়ে/অ্যাকিউমুলেশন।EMA “২০০” দিয়ে ট্রেন্ড বোঝা খুব সহজ:
- মূল্য যদি EMA “২০০”-এর ওপরে অবস্থান করে, আপট্রেন্ড
- মূল্য যদি EMA “২০০”-এর নিচে অবস্থান করে, ডাউনট্রেন্ড
এই দীর্ঘ পিরিয়ডের মুভিং অ্যাভারেজ (যেমন “২০০”) সাধারণত স্পষ্ট বলে দেয়, ট্রেন্ড এখনো সচল কি না। আপট্রেন্ডে থাকলে শুধু বাই এন্ট্রি, ডাউনট্রেন্ডে থাকলে শুধু সেল এন্ট্রি—এটা মেনে চলতে পারলে অনেক ঝামেলা এড়ানো যায়। এছাড়া অন্তর্বর্তী পুলব্যাকে এন্ট্রি নেওয়ার আগে আগের হাই বা লো আপডেট হয়েছে কি না, দেখে নেওয়া উচিত।
সাধারণত ধীরগতির মুভিং অ্যাভারেজ দিয়ে ট্রেন্ড ভেদ না হওয়া পর্যন্ত, ট্রেন্ড অক্ষত থাকে। একারণে যারা সুইং ট্রেড বা দীর্ঘমেয়াদি ট্রেড করেন, তাদের কাছে এটি খুবই উপকারী একটি গাইড।
মুভিং অ্যাভারেজ: চূড়ান্ত কথা
মুভিং অ্যাভারেজ শুধুমাত্র একটি গড় লাইন নয়। এর ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, অ্যালগোরিদমিক ট্রেডিং সিস্টেম এবং কৌশল। প্রকৃতপক্ষে, অনেক প্রাইস অ্যাকশন প্যাটার্নেও মুভিং অ্যাভারেজ লুকিয়ে থাকে।এছাড়াও, মুভিং অ্যাভারেজের নানা ধরন (SMA, EMA, LWMA ইত্যাদি) এবং পিরিয়ড সমন্বয় বিভিন্নভাবে প্রচুর ট্রেডিং সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। ট্রেডিং রোবটসহ (এটোমেটেড সিস্টেম) প্রায় সব ইন্ডিকেটর-ভিত্তিক স্ট্র্যাটেজির প্রধান উপাদান হিসেবে মুভিং অ্যাভারেজ দেখা যায়।
ট্রেডারদের কাছে মুভিং অ্যাভারেজ হলো বাজার বুঝে সঠিক এন্ট্রি নেওয়ার একটি সহজ উপায়। বাজার বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রক্রিয়া সহজতর করে তোলে বলেই এটি এত জনপ্রিয়। সুতরাং হাতের কাছে যদি এমন একটি টুল থাকে, যা বাজার বোঝা ও ট্রেডিংকে সহজ করতে পারে, তবে সেটি নিশ্চয়ই ব্যবহার করা উচিত!
পর্যালোচনা এবং মন্তব্য