বাইনারি অপশনে ট্রেডিং ডিসিপ্লিন: সাফল্যের মূলমন্ত্র
Updated: 29.04.2025
ট্রেডিং ডিসিপ্লিন বা ট্রেডারের শৃঙ্খলা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে (২০২৫)
আজকের আলোচনায় রয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা এড়ানো উচিত নয়! আমি এখানে বলব ট্রেডিং ডিসিপ্লিন সম্পর্কে—ট্রেডারে যার প্রয়োগ থাকা উচিত প্রতিটি ট্রেডে।
আপনার যা করতে ইচ্ছে হচ্ছে, তা সবসময় সঠিক নাও হতে পারে; এবং সহজ পথটিও ভুল হতে পারে। ট্রেডিং ডিসিপ্লিন ট্রেডারকে অনেক ভুল থেকে রক্ষা করে, যা হতে পারে—
অভিজ্ঞ ট্রেডারদের মধ্যেও এমন সময় আসে যখন তাঁরা আবেগ সামলাতে পারেন না। হ্যাঁ, তাঁরা ট্রেডিং মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন, পুঁজি ব্যবস্থাপনা জানেন; কিন্তু আবেগ তো আবেগই। লোভ বা লসের ভয় জেগে উঠলেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। ঠিক এই সময়ই ট্রেডিং ডিসিপ্লিন বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
একজন ট্রেডারের অভিজ্ঞতা সব সময় জমা হয়—এটা আটকানোর উপায় নেই। সেই অভিজ্ঞতা কেবল বড়াই করার সময় নয়, বরং জ্ঞান থেকেও আসে। যে জ্ঞান ট্রেডারকে স্বাভাবিকভাবে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে—একে কেউ “ট্রেডিং সিক্সথ সেন্স” বলতে পারেন, কিন্তু আসলে এটাই ডিসিপ্লিনের ফল।
একজন দক্ষ ট্রেডারকে ট্রেড করতে দেখা মানে এক ধরনের সুখকর অভিজ্ঞতা। কারণ তিনি—
এর গোপন রহস্য হলো তাদের ট্রেডিং ডিসিপ্লিন, যা তাঁরা মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর চর্চা করে গড়ে তুলেছেন। ফলত:
এটাই নতুন ও অভিজ্ঞ ট্রেডারের মধ্যে মূল পার্থক্য—একজন যা ইচ্ছা করেন, আরেকজন যা করা উচিত সেটাই করেন। এই পুরো পার্থক্যকে কয়েকটি শব্দে প্রকাশ করা যায়—ট্রেডিং ডিসিপ্লিন। আমি সাইটে কাজ করার সময় অনেক ট্রেডারের সঙ্গে কথা বলেছি। বেশিরভাগই নতুন ট্রেডার, পরামর্শ চাইতে এসেছেন। আমি তাদেরকে মানি ম্যানেজমেন্ট নিয়ম বুঝিয়েছি, ট্রেডিং পরিকল্পনা করার গুরুত্ব দেখিয়েছি, ট্রেডিং জার্নাল রাখার ও ট্রেড বিশ্লেষণের কথা বলেছি—সবগুলো নিয়ম মেনে চলতে বলেছি।
তারা কেউই বোকা ছিল না—সব বুঝত, জানতে চাইত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের মতোই করত। কারণ ডিসিপ্লিনের অভাব। আমি তো কাউকে জোর করে শাস্তি দিতে পারব না—“ভুল করলে বাঁশ দিয়ে হাতে আঘাত!”। ট্রেডারকেই বুঝতে হবে, ডিসিপ্লিন তাঁর নিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এটা কঠিন, বিশেষ করে যখন মাথায় আসে—“একটা সুসময় অপেক্ষা করে কঠোর নিয়ম মেনে ধীরে লাভ করব, নাকি এখনই চটজলদি যা ইচ্ছা করি ও দ্রুত মুনাফা নিতে পারি?” বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ দ্রুত ও সহজ পথটাই নেয়। অথচ ট্রেডিং কোনো দৌড় নয়; এটা দীর্ঘ মেয়াদের পথচলা। যেটা দ্রুত কামানো যায়, তা দ্রুত হারানোও যায়! আর উল্টোটা—যদি ধীরে ধীরে আয় করেন, সেটি হারানোও কঠিন হবে। পেশাদার ট্রেডাররা এটা জানেন, তাই তাড়া করেন না—লাভ এমনিই আসবে। তাঁদের কাজ কেবল নিশ্চিত করা যে তাঁরা প্রতিবার সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
নতুন ট্রেডারের কাছে ট্রেডিং মানে যেন এক সুক্ষ্ম দড়ির ওপর হাঁটা—পেরোতে পারলে টাকা, নইলে শূন্য। পেশাদারের কাছে এটি ফুটপাতে হাঁটার মতো—কোথাও জলকাদা থাকলে এড়িয়ে চলবেন, রাস্তা সারাই হলে অপেক্ষা করবেন, রৌদ্রোজ্জ্বল দিন হলে একটু বেশি হাঁটবেন—কোথাও “সবকিছু হারানোর” ব্যাপার নেই, বরং সাময়িক অসুবিধা মাত্র, যা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
অভিজ্ঞ ট্রেডার জানেন, লাভ বা ক্ষতির ধারাবাহিকতা—চাই তা কয়েক ট্রেড, কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস হোক—চিরস্থায়ী নয়। প্রতিটি লাভজনক ট্রেডের পর পরবর্তী ট্রেডে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আবার প্রতিটি লস ট্রেডের পর পরবর্তী ট্রেডে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে—এটাই সম্ভাব্যতার সাধারণ নিয়ম। অবশ্যই অভিজ্ঞ ট্রেডার আশাবাদী থাকেন, কিন্তু বাস্তববাদীও হন।
সম্ভাবনামূলক চিন্তাভাবনা ট্রেডারকে বোঝায় যে লসের সময় ধৈর্য ধরতে হবে—এক সময় লস থামবে, এরপর লাভজনক ট্রেডের পালা আসবে (যা চিরস্থায়ী নয়)। তাই যেখানে ট্রেডিং ক্ষতিতে রয়েছে, সেখানে সর্বনিম্ন ক্ষতি করার চেষ্টা, আর যখন পরিস্থিতি অনুকূল, তখন সর্বোচ্চ লাভ তোলা—এই ব্যবধান থেকেই আসলে একজন ট্রেডারের আয়।
কীভাবে সম্ভাবনামূলক চিন্তাভাবনা গড়ে তুলবেন? নতুন ট্রেডারদের জন্য একটি সহজ অনুশীলন আছে, যা তাঁরা ডিসিপ্লিন গড়ার জন্য অনুসরণ করতে পারেন। নিয়মগুলো হলো:
নিজেকে বাধ্য করা এত সহজ নয়—কেননা সবসময় “আরেকটু সহজ পথ” থাকে, যেমন মার্টিঙ্গেল করে অনেক বড় ট্রেড অপেন করা ইত্যাদি। কিন্তু এটাই তো অনুশীলনের মূল—ডিসিপ্লিন গড়ে তোলা।
শুধু তাই নয়, অনেক সময় দেখা যায় এই ধৈর্যশীল ট্রেডিং আসলে একটা ছোট্ট লাভ দেয় (হয়তো বিশাল কিছু নয়, তবে টাকা হারানো থেকেও তো ভালো)। যারা মনে করেন ফিক্সড রেটে ট্রেড করে লাভ করা যায় না, তাদের জন্য এটা হবে বড় অভিজ্ঞতা—“হ্যাঁ, লাভ করা সম্ভব!”
আমিও এই অনুশীলনটি করেছিলাম, যখন বুঝতে পেরেছিলাম মার্টিঙ্গেল মানেই শেষ পর্যন্ত টাকা হারানো। প্রথমে কঠিন ছিল, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শিখে ফেললাম—সঠিক পদক্ষেপ সবসময় ভালো ফল দেয়!
এখানেই আপনার প্রথম পদক্ষেপ—একটি ট্রেডিং পরিকল্পনা তৈরি করুন, এবং সেটিকে ভিত্তি করে ট্রেডিং ডিসিপ্লিন গড়ে তুলুন। সাধারণত একটি ট্রেডিং পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত থাকে:
আবারও বলছি—এই অনুশীলনটি পরিপূর্ণভাবে শেষ করুন! একবার সফল হলেই যথেষ্ট নয়; আরও দুই-তিনবার করুন যেন নিশ্চিত হতে পারেন যে এটা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। আমি তো আপনাকে পরীক্ষা করতে পারছি না, পুরোটা আপনাকেই করতে হবে—ফলাফলের মালিকও আপনিই!
এই অনুশীলনটি শেষ করার পরে, নিজের ট্রেডিং ডায়েরিতে সব কিছু লেখা চালু করুন! আমার কাছে এটা ছিল সবচেয়ে সহজ অংশ—আগের হ্যাপা পেরিয়ে এ তো মামুলি ব্যাপার। আপনাকেও তেমনই মনে হবে, কারণ সবচেয়ে কঠিন ধাপগুলো পার হয়ে গেছেন। তবু মনে রাখুন:
অনেক ট্রেডার বিভিন্ন ধরনের বস্তু “অ্যাঙ্কর” হিসেবে নেন:
সুচিপত্র
- ট্রেডিংয়ে ট্রেডিং ডিসিপ্লিন
- কীভাবে বাইনারি অপশনে আপনার ট্রেডিং ডিসিপ্লিন তৈরি বা উন্নত করবেন
- সম্ভাবনামূলক চিন্তাভাবনা এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ডিসিপ্লিন
- কীভাবে বাইনারি অপশনে ট্রেডিং ডিসিপ্লিনকে পরিপূর্ণ পর্যায়ে নিয়ে যাবেন
- অ্যাঙ্কর তৈরি করা – বাইনারি অপশন ট্রেডারের ডিসিপ্লিন গঠনে সহজ উপায়
- ভিজুয়ালাইজেশন: বাইনারি অপশন ট্রেডারে ডিসিপ্লিন গড়ার একটি পন্থা
- একজন বাইনারি অপশন ট্রেডারের জন্য ডিসিপ্লিনের ২৫টি নিয়ম
- ডিসিপ্লিন উন্নত করার ১০টি উপায়
ট্রেডিংয়ে ট্রেডিং ডিসিপ্লিন
ট্রেডিং ডিসিপ্লিন কী? ট্রেডিং ডিসিপ্লিন বলতে বোঝায় এমন একটি ক্ষমতা, যেখানে ট্রেডার সবচেয়ে কঠিন ট্রেডিং পরিস্থিতিতেও সঠিক পদক্ষেপ নেন। কিন্তু “সঠিক পদক্ষেপ” বলতে কী বোঝায়? সঠিক পদক্ষেপ বা সঠিক সিদ্ধান্ত হলো সেসব কাজ যা শেষ পর্যন্ত ট্রেডারকে লাভের দিকে নিয়ে যায়। এগুলো ট্রেডারের ইচ্ছার সঙ্গে মিলতেও পারে, নাও পারে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল ট্রেডিং: অনেক ট্রেডার জানেন, এই পদ্ধতিতে দীর্ঘমেয়াদে টাকা হারানোর সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু মানসিকভাবে এটি ব্যবহার করা সহজ বলে মনে হয়। অন্যদিকে ট্রেডিং ডিসিপ্লিন কাউকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করে, যা ডিপোজিট রক্ষা করে এবং লাভের পথে ধরে রাখে।আপনার যা করতে ইচ্ছে হচ্ছে, তা সবসময় সঠিক নাও হতে পারে; এবং সহজ পথটিও ভুল হতে পারে। ট্রেডিং ডিসিপ্লিন ট্রেডারকে অনেক ভুল থেকে রক্ষা করে, যা হতে পারে—
- ট্রেডারের আবেগজনিত সমস্যা
- অনিশ্চয়তা
- ভয়
- শারীরিক অসুস্থতা বা ক্লান্তি
- ট্রেডিং কৌশলের নিয়ম থেকে বিচ্যুতি
অভিজ্ঞ ট্রেডারদের মধ্যেও এমন সময় আসে যখন তাঁরা আবেগ সামলাতে পারেন না। হ্যাঁ, তাঁরা ট্রেডিং মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন, পুঁজি ব্যবস্থাপনা জানেন; কিন্তু আবেগ তো আবেগই। লোভ বা লসের ভয় জেগে উঠলেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। ঠিক এই সময়ই ট্রেডিং ডিসিপ্লিন বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
একজন ট্রেডারের অভিজ্ঞতা সব সময় জমা হয়—এটা আটকানোর উপায় নেই। সেই অভিজ্ঞতা কেবল বড়াই করার সময় নয়, বরং জ্ঞান থেকেও আসে। যে জ্ঞান ট্রেডারকে স্বাভাবিকভাবে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে—একে কেউ “ট্রেডিং সিক্সথ সেন্স” বলতে পারেন, কিন্তু আসলে এটাই ডিসিপ্লিনের ফল।
একজন দক্ষ ট্রেডারকে ট্রেড করতে দেখা মানে এক ধরনের সুখকর অভিজ্ঞতা। কারণ তিনি—
- শান্ত থাকেন, কারণ জানেন তাঁর সব টাকা হারানোর ঝুঁকি নেই
- সতর্ক থাকেন, কারণ অপ্রয়োজনীয় ভয় নেই যা মনোযোগ নষ্ট করবে
- আত্মবিশ্বাসী থাকেন, কারণ তাঁর বিশাল অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান রয়েছে
- নির্ভীক, কারণ যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তাঁর ট্রেডিং পরিকল্পনায় নির্দেশনা থাকে
এর গোপন রহস্য হলো তাদের ট্রেডিং ডিসিপ্লিন, যা তাঁরা মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর চর্চা করে গড়ে তুলেছেন। ফলত:
- তাঁরা শান্ত, কারণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ম আছে, এবং সেগুলো মেনে চলার দৃঢ় ডিসিপ্লিনও আছে!
- সতর্ক, কারণ ট্রেডিংয়ের সময় কীভাবে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হয়—ডিসিপ্লিন তাই শেখায়!
- আত্মবিশ্বাসী, কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে ডিসিপ্লিন মেনে চলা “আকস্মিক ভাগ্য”র চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক!
- নির্ভীক, কারণ একটা ট্রেডিং পরিকল্পনা রয়েছে এবং ডিসিপ্লিন যেকোনো পরিস্থিতিতে সে পরিকল্পনা মেনে চলতে বাধ্য করে!
- শান্তভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা না মেনে, মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি আকর্ষণীয় মনে হবে। তখন অনিশ্চয়তায় ভোগার পরিবর্তে একটা “সহজ” উপায় বেছে নেবেন।
- মনোযোগ হারিয়ে যাবে, আর সমস্ত দৃষ্টি গিয়ে পড়বে বাইনারি অপশন ব্রোকারের ব্যালান্স সংখ্যার দিকে।
- আত্মবিশ্বাস কই? ট্রেডিং বারবার লসে যাচ্ছে বা শূন্যের কোটায় ঘুরছে।
- নির্ভীকতা? ট্রেডিং প্ল্যানের কথা ভুলে যাবেন, বিশেষ করে লস বা লাভ শুরু হলে।
এটাই নতুন ও অভিজ্ঞ ট্রেডারের মধ্যে মূল পার্থক্য—একজন যা ইচ্ছা করেন, আরেকজন যা করা উচিত সেটাই করেন। এই পুরো পার্থক্যকে কয়েকটি শব্দে প্রকাশ করা যায়—ট্রেডিং ডিসিপ্লিন। আমি সাইটে কাজ করার সময় অনেক ট্রেডারের সঙ্গে কথা বলেছি। বেশিরভাগই নতুন ট্রেডার, পরামর্শ চাইতে এসেছেন। আমি তাদেরকে মানি ম্যানেজমেন্ট নিয়ম বুঝিয়েছি, ট্রেডিং পরিকল্পনা করার গুরুত্ব দেখিয়েছি, ট্রেডিং জার্নাল রাখার ও ট্রেড বিশ্লেষণের কথা বলেছি—সবগুলো নিয়ম মেনে চলতে বলেছি।
তারা কেউই বোকা ছিল না—সব বুঝত, জানতে চাইত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের মতোই করত। কারণ ডিসিপ্লিনের অভাব। আমি তো কাউকে জোর করে শাস্তি দিতে পারব না—“ভুল করলে বাঁশ দিয়ে হাতে আঘাত!”। ট্রেডারকেই বুঝতে হবে, ডিসিপ্লিন তাঁর নিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এটা কঠিন, বিশেষ করে যখন মাথায় আসে—“একটা সুসময় অপেক্ষা করে কঠোর নিয়ম মেনে ধীরে লাভ করব, নাকি এখনই চটজলদি যা ইচ্ছা করি ও দ্রুত মুনাফা নিতে পারি?” বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ দ্রুত ও সহজ পথটাই নেয়। অথচ ট্রেডিং কোনো দৌড় নয়; এটা দীর্ঘ মেয়াদের পথচলা। যেটা দ্রুত কামানো যায়, তা দ্রুত হারানোও যায়! আর উল্টোটা—যদি ধীরে ধীরে আয় করেন, সেটি হারানোও কঠিন হবে। পেশাদার ট্রেডাররা এটা জানেন, তাই তাড়া করেন না—লাভ এমনিই আসবে। তাঁদের কাজ কেবল নিশ্চিত করা যে তাঁরা প্রতিবার সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
নতুন ট্রেডারের কাছে ট্রেডিং মানে যেন এক সুক্ষ্ম দড়ির ওপর হাঁটা—পেরোতে পারলে টাকা, নইলে শূন্য। পেশাদারের কাছে এটি ফুটপাতে হাঁটার মতো—কোথাও জলকাদা থাকলে এড়িয়ে চলবেন, রাস্তা সারাই হলে অপেক্ষা করবেন, রৌদ্রোজ্জ্বল দিন হলে একটু বেশি হাঁটবেন—কোথাও “সবকিছু হারানোর” ব্যাপার নেই, বরং সাময়িক অসুবিধা মাত্র, যা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
কীভাবে বাইনারি অপশনে আপনার ট্রেডিং ডিসিপ্লিন তৈরি বা উন্নত করবেন
যেহেতু ট্রেডিং ডিসিপ্লিন সাফল্যের প্রধান ভিত্তিগুলোর একটি, ধরে নেওয়াই যায় আপনি এটি উন্নত করার উপায় জানতে আগ্রহী। আপনি হয়তো ইতিমধ্যে অনুমান করতে পারছেন, বেশিরভাগ পদ্ধতিই অনুশীলনমূলক। প্রথমে দরকার চিন্তাধারা বদলানো—“সম্ভাবনামূলক চিন্তাভাবনা” শেখা।সম্ভাবনামূলক চিন্তাভাবনা এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ডিসিপ্লিন
সম্ভাবনামূলক চিন্তাভাবনা বলতে এমন মানসিকতা বোঝায়, যেখানে ট্রেডার শেখা জ্ঞানকে ভিত্তি করে ট্রেডের ফলাফল নিয়ে কম ভাবেন। উদাহরণ: নতুন ট্রেডার যদি কয়েকটি লস ট্রেড পান, পরবর্তী ট্রেডও লস হবে মনে করেন (যদিও অজান্তে আশা থাকে লাভের)। আবার কয়েকটি লাভের ট্রেড হলে পরবর্তী ট্রেডও লাভের হবে বলে ধরে নেন।অভিজ্ঞ ট্রেডার জানেন, লাভ বা ক্ষতির ধারাবাহিকতা—চাই তা কয়েক ট্রেড, কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস হোক—চিরস্থায়ী নয়। প্রতিটি লাভজনক ট্রেডের পর পরবর্তী ট্রেডে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আবার প্রতিটি লস ট্রেডের পর পরবর্তী ট্রেডে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে—এটাই সম্ভাব্যতার সাধারণ নিয়ম। অবশ্যই অভিজ্ঞ ট্রেডার আশাবাদী থাকেন, কিন্তু বাস্তববাদীও হন।
সম্ভাবনামূলক চিন্তাভাবনা ট্রেডারকে বোঝায় যে লসের সময় ধৈর্য ধরতে হবে—এক সময় লস থামবে, এরপর লাভজনক ট্রেডের পালা আসবে (যা চিরস্থায়ী নয়)। তাই যেখানে ট্রেডিং ক্ষতিতে রয়েছে, সেখানে সর্বনিম্ন ক্ষতি করার চেষ্টা, আর যখন পরিস্থিতি অনুকূল, তখন সর্বোচ্চ লাভ তোলা—এই ব্যবধান থেকেই আসলে একজন ট্রেডারের আয়।
কীভাবে সম্ভাবনামূলক চিন্তাভাবনা গড়ে তুলবেন? নতুন ট্রেডারদের জন্য একটি সহজ অনুশীলন আছে, যা তাঁরা ডিসিপ্লিন গড়ার জন্য অনুসরণ করতে পারেন। নিয়মগুলো হলো:
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ম অনুযায়ী এমন একটি অর্থের পরিমাণ ঠিক করুন, যা দিয়ে আপনি ২০টি ট্রেড করবেন (হয়তো ব্রোকারের সর্বনিম্ন ইনভেস্টমেন্ট ব্যবহার করবেন)।
- নিজের পছন্দের একটি ট্রেডিং কৌশল বেছে নিন এবং যেখানে এন্ট্রি নেবেন, তার নিয়ম স্পষ্টভাবে লিখে ফেলুন।
- ২০টি ট্রেড করুন ঠিক ওই কৌশল মেনে, এবং প্রতিটি ট্রেডে আগেই নির্ধারিত ফিক্সড এমাউন্ট ইনভেস্ট করুন।
- যদি কোনো একটি ট্রেডও কৌশলের নিয়ম বা ঝুঁকি নিয়ম ভেঙে ওপেন হয়, তাহলে গোটা প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে।
নিজেকে বাধ্য করা এত সহজ নয়—কেননা সবসময় “আরেকটু সহজ পথ” থাকে, যেমন মার্টিঙ্গেল করে অনেক বড় ট্রেড অপেন করা ইত্যাদি। কিন্তু এটাই তো অনুশীলনের মূল—ডিসিপ্লিন গড়ে তোলা।
শুধু তাই নয়, অনেক সময় দেখা যায় এই ধৈর্যশীল ট্রেডিং আসলে একটা ছোট্ট লাভ দেয় (হয়তো বিশাল কিছু নয়, তবে টাকা হারানো থেকেও তো ভালো)। যারা মনে করেন ফিক্সড রেটে ট্রেড করে লাভ করা যায় না, তাদের জন্য এটা হবে বড় অভিজ্ঞতা—“হ্যাঁ, লাভ করা সম্ভব!”
আমিও এই অনুশীলনটি করেছিলাম, যখন বুঝতে পেরেছিলাম মার্টিঙ্গেল মানেই শেষ পর্যন্ত টাকা হারানো। প্রথমে কঠিন ছিল, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শিখে ফেললাম—সঠিক পদক্ষেপ সবসময় ভালো ফল দেয়!
কীভাবে বাইনারি অপশনে আপনার ট্রেডিং ডিসিপ্লিনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবেন
এই অনুশীলন (আমি উপরে উল্লেখ করেছি) অবশ্যই দুর্দান্ত ফল দেয়, তবে এটি মূলত ট্রেডারকে সম্ভাবনামূলক চিন্তাভাবনা শেখানোর উদ্দেশ্যে—যে দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে যেকোনো ট্রেডিং পরিস্থিতিকেই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা যায়। আমরা এখানে নিজেদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টিও চাই। ট্রেডিং ডিসিপ্লিন ধাপে ধাপে গড়ে তুলতে হয়—সবকিছু একবারে আয়ত্তে আনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে—একজন ট্রেডারের লাভজনক ট্রেডিংয়ের ভিত্তি কী কী:- আবেগ নিয়ন্ত্রণ – ট্রেডিং মনস্তত্ত্ব
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ম এবং মানি ম্যানেজমেন্ট
- ট্রেডিং কৌশলের নিয়ম
- ট্রেডিং পরিকল্পনার নিয়ম
- ট্রেডারের ট্রেডিং ডায়েরি
- টাইম ম্যানেজমেন্ট
এখানেই আপনার প্রথম পদক্ষেপ—একটি ট্রেডিং পরিকল্পনা তৈরি করুন, এবং সেটিকে ভিত্তি করে ট্রেডিং ডিসিপ্লিন গড়ে তুলুন। সাধারণত একটি ট্রেডিং পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত থাকে:
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও মানি ম্যানেজমেন্টের নিয়ম
- ট্রেডিং কৌশলের নিয়ম
- টাইম ম্যানেজমেন্ট
- একটি ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করুন
- ট্রেডের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করুন
- ট্রেডিং প্ল্যানের নিয়ম কঠোরভাবে মেনে ট্রেড করুন
- যদি কোনো কারণে ট্রেডিং প্ল্যানের কোনো একটি ধাপ লঙ্ঘিত হয়, পুরো অনুশীলন আবার শুরু করুন!
আবারও বলছি—এই অনুশীলনটি পরিপূর্ণভাবে শেষ করুন! একবার সফল হলেই যথেষ্ট নয়; আরও দুই-তিনবার করুন যেন নিশ্চিত হতে পারেন যে এটা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। আমি তো আপনাকে পরীক্ষা করতে পারছি না, পুরোটা আপনাকেই করতে হবে—ফলাফলের মালিকও আপনিই!
এই অনুশীলনটি শেষ করার পরে, নিজের ট্রেডিং ডায়েরিতে সব কিছু লেখা চালু করুন! আমার কাছে এটা ছিল সবচেয়ে সহজ অংশ—আগের হ্যাপা পেরিয়ে এ তো মামুলি ব্যাপার। আপনাকেও তেমনই মনে হবে, কারণ সবচেয়ে কঠিন ধাপগুলো পার হয়ে গেছেন। তবু মনে রাখুন:
- ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করুন
- ট্রেডের জন্য অর্থ বরাদ্দ করুন
- ট্রেডিং প্ল্যানের নিয়ম মেনে ট্রেড করুন, আর প্রতিটি তথ্য লিখে রাখুন ট্রেডিং ডায়েরিতে
- যদি কোনো ধাপেই নিয়ম লঙ্ঘিত হয়, আবার প্রথম থেকে শুরু করুন!
অ্যাঙ্কর তৈরি করা – কীভাবে বাইনারি অপশন ট্রেডারের ডিসিপ্লিন গঠনের কাজ সহজ করবেন
নিজের ট্রেডিং ডিসিপ্লিন গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে জটিল একটি প্রক্রিয়া। তাই আগেভাগে প্রস্তুত ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে সচেতন ট্রেডাররা একটি কার্যকর উপায় খুঁজে বের করেছেন। এটি হলো “অ্যাঙ্কর” তৈরি করা, যা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করবে। “অ্যাঙ্কর” বলতে সাধারণত একটি দৃশ্যমান বা স্পর্শযোগ্য বস্তু বোঝায়, যা লাভজনক ট্রেডিংয়ের একটি ইতিবাচক ধারণার সঙ্গে যুক্ত হয়। আমি নিজে ব্যবহার করেছিলাম একটি রিস্টব্যান্ড, যেটি ব্যায়াম করার আগে, পরে এবং ট্রেডিংয়ের আগে পরে পরতাম। আরেকটি ছিল একটি কী-রিং, যা টেবিলে চোখের সামনেই থাকত, মনে করিয়ে দিত যে আমাকে পরিকল্পনার নিয়ম মেনে চলতে হবে।অনেক ট্রেডার বিভিন্ন ধরনের বস্তু “অ্যাঙ্কর” হিসেবে নেন:
- কেউ নির্দিষ্ট ধরনের গান ছাড়া ট্রেডে মন বসাতে পারেন না
- কেউ আলো বা ঘরের পরিবেশ নিজের মতো করে সাজিয়ে নেন
- কেউ আমার মতো ছোটোখাটো জিনিস বেছে নেন
- কেউ “লাকি” টি-শার্ট বা পছন্দের স্লিপার না পরলে লাভজনক ট্রেড করতে পারেন না
- আর কেউ হয়তো দেয়ালে বড় হরফে লিখে রাখেন: “বোকামি কোরো না—নিয়ম ভাঙবে না!”
ভিজুয়ালাইজেশন: বাইনারি অপশন ট্রেডারে ডিসিপ্লিন গড়ার একটি পন্থা
ভিজুয়ালাইজেশন অর্থ হচ্ছে মনের চোখে নিজেকে (অথবা নিজেকে) সফল মানুষ (ট্রেডার) হিসেবে দেখা। জীবনের নানা ক্ষেত্রেই এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়: ব্যবসা, ক্রীড়া, শখ—সবখানেই। আপনাকে ট্রেডিংয়ের সময় কী কী করেন, তা কল্পনা বা মস্তিষ্কে “উপস্থাপন” করতে হবে। ভিজুয়ালাইজেশন শুরু হয় শিথিলতা থেকে:- স্বস্তিদায়ক কোনো ভঙ্গিতে বসুন বা শুয়ে পড়ুন
- চোখ বন্ধ করুন
- শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করুন
- সব বিষয়ে মন মুক্ত করে রাখুন
- যে ঘরে বা জায়গায় আপনি ট্রেড করেন, তার পরিবেশ
- চারপাশের গন্ধ
- ঘরের আলো
- ছোটখাটো সব ব্যাপার: টেবিলে কী রয়েছে, চেয়ার কেমন, দেয়ালে কী টাঙানো ইত্যাদি
- এরপর ভাবুন কেমন করে আপনি ট্রেডিংয়ের প্রস্তুতি নেন: কীভাবে ট্রেডিং ডায়েরি দেখেন, কীভাবে ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করেন, অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার চেক করেন, কীভাবে ব্রোকারের প্ল্যাটফর্ম ওপেন করেন
- প্রকৃত ট্রেডিং চলার দৃশ্যও ভাবুন। কেমন করে এন্ট্রি নেন, ট্রেডিং প্ল্যান অনুসরণ করেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ম মেনে চলেন, সিগন্যাল খোঁজায় মনোযোগ দেন, আবেগের বশে নয় বরং শান্ত মাথায় সিদ্ধান্ত নেন, একটি ট্রেড লাভে বন্ধ হয়—আপনি শান্ত; কোনো ট্রেড লসে বন্ধ হলেও শান্ত। সবশেষে ট্রেডিং ডায়েরি পূরণ করেন, ফলাফলে খুশি হন।
বাইনারি অপশন ট্রেডারের ডিসিপ্লিনের ২৫টি নিয়ম
- বাজার আপনার ডিসিপ্লিনের বিনিময়ে আপনাকে পুরস্কৃত করে! যত বেশি আপনি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন, তত বড় সাফল্য পাবেন।
- আপনার ডিসিপ্লিন যেন সর্বদা ১০০% বজায় থাকে, অন্যথায় সেটি নেই! ট্রেডিংয়ে কখনো ডিসিপ্লিন ছাড়া কাজ করার সুযোগ নেই। একবার ভুল করা মানেই ডিসিপ্লিন নেই, সেক্ষেত্রে লাভজনক ফল আশা করা অযৌক্তিক।
- ট্রেড খারাপ গেলে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করুন! লাভজনক সময়ের পর আসবে ক্ষতির সময়। যেখানেই সম্ভব, কম ক্ষতি করে ট্রেড বন্ধ করুন। কখনোই “রিকভার” করার চেষ্টা করবেন না—সেটা একমুখী ফ্লাইট!
- একটি লাভজনক ট্রেড যেন লসের ট্রেডে পরিণত না হয়! এন্ট্রি নেওয়ার পর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করুন—আগে সময়ে ট্রেড বন্ধ করে লাভের সুযোগ নষ্ট করবেন না। একবার ট্রেড ওপেন করলে, আপনি আগেই জানতেন এ টাকা হারাতে পারেন—সুতরাং পরিকল্পনামাফিক শেষ হতে দিন।
- কোনোভাবেই যেন আপনার ক্ষতি আয়ের চেয়ে বেশি না হয়! সবসময় ঝুঁকি লক্ষ্য রাখুন—ট্রেড ভালো না চললে থেমে যান, ভালো চললে আরও লাভ তুলুন।
- সব সময় নিজের মতো থাকুন! নিজের ট্রেডিং শৈলীর সঙ্গে মানানসই কৌশলই বেছে নিন।
- নিজের ট্রেডিংকে নিজের মতো করে সাজান! ট্রেডিং কৌশলের কোনো দিক যদি অপছন্দ হয়, পরিবর্তন করুন—আপনার আরামদায়ক হওয়াটাই আগে জরুরি।
- কাল নতুন একটি ট্রেডিং-ডে! আজ ক্ষতি হলেও মন খারাপ নয়—আগামীকাল নতুন সুযোগ আসবে। আজকের জন্য মূল কাজ হলো ব্যালান্স রক্ষা করা।
- বড় অঙ্কের ট্রেড করার “অধিকার” অর্জন করুন! আপনি হয়তো বড় পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারেন, তবু অল্প দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে বড় পরিমাণের দিকে এগোন।
- প্রয়োজন ছাড়া অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি এড়িয়ে চলুন! কোনো ট্রেড যদি আপনার নিয়মের সঙ্গে মানানসই না হয়, সেটি এড়িয়ে যান—লস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- প্রথম স্বীকৃত ক্ষতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! লাভজনক ট্রেডিংয়ের অংশ হিসেবেই লসকে মেনে নিতে শিখুন, এর বিকল্প নেই।
- প্রার্থনা-ভরসা বা অযৌক্তিক আশা নয়, যদি তা করেন, আপনি ইতিমধ্যে হেরে গেছেন! এটা তখনই ঘটে, যখন আপনি সেই ট্রেড নিয়ে ভয় পাচ্ছেন—অর্থাৎ আপনি খুব বেশি অর্থ ঢেলে দিয়েছেন (ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা লঙ্ঘন বা নিজের মানসিক সীমা ছাড়িয়ে)।
- সংবাদ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করবেন না! নিউজ-ভিত্তিক ট্রেডিং অত্যন্ত জটিল পদ্ধতি; প্রয়োজনীয় জ্ঞান না থাকলে, গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক নিউজের সময়টা এড়িয়ে চলুন।
- আপনার পছন্দের চার্ট টাইমফ্রেম ব্যবহার করুন! নিজের কৌশলের উপযোগী টাইমফ্রেম বেছে নিন। বড় টাইমফ্রেমে সিগন্যাল কম মিললেও, সাধারণত ফল ভালো হয়।
- টাকা হারানোর বিষয়টি মনে প্রাণে গ্রহণ করুন! লস ট্রেড আসবেই, তাই ইতিবাচকভাবে ভাবুন—“এটা আগেই বা পরে ঘটত, এখন হওয়ায় পরের ট্রেডে লাভের সম্ভাবনা বেড়েছে!”
- কিছু সময় ট্রেডে লাভ না হলে সেদিনের জন্য থেমে যান! যদি দেখেন বাজার একেবারেই নিরপেক্ষ (জিরো প্রফিট/লস) আচরণ করছে, সেদিন আর চেষ্টা করবেন না।
- নিজেকে বড় লস করতে দেবেন না! আপনার অ্যাকাউন্টের ৫%-এর বেশি কখনো এক ট্রেডে ইনভেস্ট করবেন না।
- বড় লক্ষ্যকে ছোট ভাগে ভাগ করুন! সঠিক লক্ষ্য স্থির করে সেগুলোকে দৈনিক বা সাপ্তাহিকভাবে ভাগ করে রাখুন। এতে অল্প অল্প করে প্রতিদিন এগোনো যায়।
- একটি ট্রেড দিয়ে রিকভার করার চেষ্টা করবেন না! এক ট্রেড সব ঠিক করে দেবে না—বরং ভবিষ্যতে আরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলবে। এক ট্রেডে পুরো ব্যালান্স লাগালে আপনি হেরে যাবেন!
- ক্রমিক ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টাই আত্মবিশ্বাস ও নিয়ন্ত্রণ আনে! একই কাজ বারবার করুন—এতেই সাফল্যের চাবিকাঠি।
- নিজের পুঁজি ব্যবস্থাপনা শিখুন! ঝুঁকি ও মানি ম্যানেজমেন্টের নিয়ম মেনে চলুন, না হলে সব হারাবেন।
- একই ধরনের সফল ট্রেড বারবার করুন! যেসব কৌশলে আপনার লাভ হয় এবং যেগুলো আপনি খুব ভালোভাবে বোঝেন, সেগুলোই ব্যবহার করুন।
- অতিরিক্ত ভাবনা-চিন্তা নয়! অনেক সময় বেশি ভাবলে দ্বিধা বেড়ে যায়—চার্টে এমন কিছু দেখতে শুরু করেন, যা আপনার নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সিগন্যাল দেখলেই এন্ট্রি নিন!
- বাজারের চোখে সব ট্রেড সমান! আপনি \$১০ মিলিয়ন বা \$১০০ মিলিয়নের ট্রেড ওপেন করুন, বাজারের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। তাই নিজের অ্যাকাউন্টের কথা চিন্তা করুন—অতিরিক্ত ঝুঁকি নেবেন না।
- বাজার সবসময় ঠিক! বাজারকে জয় করা বা কিছু প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না—তার ফলস্বরূপ আপনি হারবেন। কাজ হলো বাজার যেদিকে যায়, সেখানে শান্তভাবে তাকে অনুসরণ করা।
ডিসিপ্লিন উন্নত করার ১০টি উপায়
- একটি ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করুন, যেখানে যা দরকার সবকিছুই থাকবে। প্রতিদিন ট্রেড শুরুর আগে এটি পড়ে নিন।
- ব্যায়াম বা খেলাধুলা শুরু করুন। শারীরিক কসরতে মানুষের ডিসিপ্লিন বাড়ে, যা ট্রেডিংয়েও কাজে লাগবে।
- কোনো একটি কাজ খুঁজে বের করুন যেটি আপনি অনেক দিন ধরে এড়িয়ে চলেছেন (ভোর ৮টায় ওঠা, ১১টার আগে ঘুমানো, প্রতিদিন দৌড়ানো ইত্যাদি)। টানা দুই সপ্তাহ এটি করুন।
- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রুটিনে নতুন কিছু যোগ করুন। যেমন প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৫ মিনিট, তৃতীয় সপ্তাহে ৬০ মিনিট। ক্রমে কাজ কঠিন করুন, ডিসিপ্লিনও বাড়বে।
- নিজের উন্নতির হিসাব রাখার জন্য কাউকে খুঁজে নিন—যে নিয়মিত আপনার আগ progreso পর্যবেক্ষণ করবে। বাইরের কারো কাছে জবাবদিহি করতে হলে নিয়ম সহজে মানা যায়।
- প্রয়োজন হলে একটি কোচ বা পরামর্শদাতা নিন, যিনি আপনাকে দায়িত্বজ্ঞান ধরে রাখার ব্যাপারে সাহায্য করবেন।
- অনেক ট্রেডারের বড় সমস্যা হলো—ইচ্ছা হলেই ট্রেডে ঢুকে পড়েন। শিখে নিন কখন শুধুই পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রেড করবেন, ফ্রি টাইম পেলেই নয়।
- প্রতিদিনের একটি রুটিন তৈরি করুন। দিনের শেষে দেখুন, সেটি মেনে চলতে পেরেছেন কি না।
- যদি কোনো ট্রেডে এন্ট্রি নিতে আপনার ইচ্ছে না করে, ট্রেডিং ছেড়ে অন্য কিছু করুন: ২০ বার পুশ-আপ দিন, কফি বানান, বা বারান্দায় একটু বাতাস খান। ট্রেড থেকে ৫-১০ মিনিট বিরতি নিয়ে মস্তিষ্ককে অন্য দিকে ফেরান।
- চ্যারিটি বা সেবামূলক কাজে জড়িত হোন। বিনা স্বার্থে অন্যকে সহায়তা করতে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োজন—যেটি ডিসিপ্লিন গড়ার পথেও সহায়ক।
পর্যালোচনা এবং মন্তব্য