মার্টিঙ্গেল কৌশল, টেবিল ও পদ্ধতি মার্টিঙ্গেল: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে বিড বৃদ্ধি (2025)
মার্টিঙ্গেল সিস্টেম হল জুয়া খেলার জগতের একটি বাজি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। মূলত ক্যাসিনো বা জুয়ার খেলা থেকেই বাইনারি অপশনে (Binary Options) এই হার বৃদ্ধি পদ্ধতি এসেছে। এটি কি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক? বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে এই পদ্ধতিটি কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ? আদৌ কি এটি ব্যবহার করা উচিত? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আপনি এই প্রবন্ধে পাবেন।
সূচিপত্র
- মার্টিঙ্গেল সিস্টেম ও পদ্ধতি – কী এটি?
- জুয়া ও ক্যাসিনোতে মার্টিঙ্গেল
- বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে মার্টিঙ্গেল পদ্ধতির টেবিল
- মার্টিঙ্গেল ও অনলাইনে হারের বৃদ্ধি: বাইনারি অপশনের জন্য রেট ক্যালকুলেটর
- বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য মার্টিঙ্গেল বিড গণনার সূত্র
- বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল সিস্টেম ও হার বৃদ্ধির পদ্ধতি কীভাবে ব্যবহার করবেন
- কেন বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে মার্টিঙ্গেল ও হার বৃদ্ধি কার্যকর হয় না
- কাকে উপকৃত করে বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল ও বাজি বৃদ্ধি পদ্ধতি
- কেন ট্রেডাররা বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল ও হার বৃদ্ধি ব্যবহার করে আমানত হারায়
- বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল কৌশলের সুবিধা
- বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে হার বৃদ্ধি ও মার্টিঙ্গেলের অসুবিধা
- বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে মার্টিঙ্গেল ব্যবহার করা উচিত কিনা
- কীভাবে বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল ট্রেডিং বন্ধ করবেন
- মার্টিঙ্গেল কৌশলের সারসংক্ষেপ
মার্টিঙ্গেল সিস্টেম ও পদ্ধতি – কী এটি?
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি বা কৌশল হল এমন একটি মানি ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি যা বহু বাইনারি অপশন (Binary Options) ট্রেডার ব্যবহার করে থাকেন। এর মূল কথা হল, একটি ট্রেড লোকসান গেলে পরবর্তী ট্রেডটি আগের চেয়ে বড় অঙ্কে খোলা হয়, যাতে ঐ মুনাফা আগের সব লোকসান পুষিয়ে দিতে পারে। যখনই কোন লাভজনক ট্রেড পাওয়া যায়, তখন সেই সিরিজটি “রিসেট” হয় এবং ট্রেডার আবার সর্বনিম্ন পরিমাণ থেকে শুরু করেন।
এইভাবে, আপনি মার্টিঙ্গেল ব্যবস্থায় একাধিক ট্রেড খুলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি এমন কোনো ব্রোকারে (broker) ট্রেড করেন যেখানে সঠিক পূর্বাভাসে 80% লাভ পাওয়া যায়, এবং আপনি $1 দিয়ে শুরু করেন:
- ১ম ট্রেড: $1
- ২য় ট্রেড: $3.25
- ৩য় ট্রেড: $8.31
- ৪র্থ ট্রেড: $19.7
- ৫ম ট্রেড: $45.33
- ৬ষ্ঠ ট্রেড: $103
- ৭ম ট্রেড: $232.74
- ৮ম ট্রেড: $524.67
- ৯ম ট্রেড: $1181.51
৯ম ট্রেড সম্পন্ন করতে আপনার ব্যালেন্স কমপক্ষে $2119.5 থাকা প্রয়োজন। চলুন দেখি, যদি এসবের মধ্যে কোনো একটি ট্রেড লাভে বন্ধ হয়, তাহলে মোট কত লাভ হতে পারে। এজন্য আমরা মার্টিঙ্গেল কৌশলের টেবিলটি ব্যবহার করব:
বিড | 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 |
ট্রেডের পরিমাণ | 1$ | 3.25$ | 8.31$ | 19.7$ | 45.33$ | 103$ | 232.74$ | 524.67$ | 1181.51$ |
ভুল পূর্বাভাসে লোকসান | 1$ | 4.25$ | 12.56$ | 32.26$ | 77.59$ | 180.59$ | 413.33$ | 938$ | 2119.5$ |
সঠিক পূর্বাভাসে লাভ | 0.8$ | 2.6$ | 6.648$ | 15.76$ | 36.264$ | 82.4$ | 186.192$ | 419.736$ | 945.208$ |
নেট মুনাফা | 0.8$ | 1.6$ | 2.398$ | 3.2$ | 4.004$ | 4.81$ | 5.602$ | 6.406$ | 7.208$ |
এই টেবিলের হিসেবে, প্রত্যেক ধাপে $0.8 করে নেট মুনাফা বৃদ্ধি পায়। তবে লক্ষ্য করুন, এখানে ঝুঁকি অস্বাভাবিকভাবে অনেক বেড়ে যাচ্ছে, অথচ লাভের পরিমাণ খুবই কম। প্রথম ট্রেডে শুধু $1 হারানোর সম্ভাবনা থাকে এবং $0.8 লাভ করা যায়, কিন্তু তৃতীয় ট্রেডে লোকসান $12.56 পর্যন্ত উঠে যায় যেখানে নেট লাভ মাত্র $3.2। ৫ম ট্রেডে ঝুঁকি $77.59, লাভ মাত্র $4। ৭ম ট্রেডে $413.33 ঝুঁকি নিয়ে লাভের সুযোগ মাত্র $5.6। ৯ম ট্রেডে $2119.5 ডলারের ঝুঁকি নিয়ে লাভ হবে মাত্র $7.2।
মার্টিঙ্গেল কৌশলকে অবশ্যই একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ হিসেবে দেখা উচিত—একটি আলাদা ট্রেড হিসেবে নয়। এই পদ্ধতিতে ট্রেড করতে প্রচুর মূলধন দরকার হয়। যেমন, $10 দিয়ে তো দূরের কথা, এমনকি $500 দিয়েও মার্টিঙ্গেল অনুযায়ী ট্রেড শুরু করাটা টেকসই নয়; এখানে প্রায়ই হাজার হাজার ডলারের উপরে মূলধন প্রয়োজন হয়। এমনকি বড় মূলধন থাকলেও এটি নিয়মিত আয় নিশ্চিত করে না।
মার্টিঙ্গেলের প্রতিটি ধাপ সামান্য হলেও লাভের সুযোগ দেয়; কিন্তু প্রতিটি নতুন ধাপে ঝুঁকি দ্রুত বেড়ে যায় এবং আগের সব লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার আশায় আরও বড় অঙ্ক ঝুঁকিতে ফেলতে হয়।
জুয়া ও ক্যাসিনোতে মার্টিঙ্গেল সিস্টেম
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি মূলত ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার জন্য তৈরি হয়েছিল। এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি বাজি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা, যাতে পরিসংখ্যানগতভাবে বিজয়ের সম্ভাবনা প্লেয়ারের পক্ষে যায়, প্রতিষ্ঠানের (ক্যাসিনোর) বিপক্ষে নয়।
একটি সত্য/মিথ্যা ফলের সম্ভাবনা যদি ৫০/৫০ ধরা হয় (যেমন, রুলেটে শুধু কালো কিংবা লাল ঘর), তাহলে মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে প্রত্যেক ধাপে প্লেয়ারের পক্ষেই সম্ভাবনার হার বাড়ে।
বিড নম্বর | লেনদেনের পরিমাণ | মোট বিনিয়োগ | লাভজনক পূর্বাভাসের সম্ভাবনা | লোকসানি পূর্বাভাসের সম্ভাবনা |
1 | 1 | 1 | 48,6% | 51,4% |
2 | 2 | 3 | 72,9% | 27,1% |
3 | 4 | 7 | 85,7% | 14,3% |
4 | 8 | 15 | 92,5% | 7,5% |
5 | 16 | 31 | 96,0% | 4% |
6 | 32 | 63 | 97,9% | 2,1% |
7 | 64 | 127 | 98,9% | 1,1% |
8 | 128 | 255 | 99,4% | 0,6% |
9 | 256 | 511 | 99,7% | 0,3% |
10 | 512 | 1023 | 99,8% | 0,2% |
রুলেটে শুধু লাল ও কালো ঘর থাকলে (শূন্য ঘর বাদ দিয়ে) এবং প্রতিটি জয়ের ক্ষেত্রে ১০০% পেআউট থাকলে, তত্ত্বগতভাবে মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে খেলোয়াড়ের জয়ের সম্ভাবনা ধাপে ধাপে বেড়ে চলে। যখনই লাল ঘরে বল পড়ছে না, পরেরবার কালো ঘরে পড়ার সম্ভাবনা পরিসংখ্যানগতভাবে বাড়ছে বলে ধরা হয়। ফলস্বরূপ, দীর্ঘ সময়ে খেলোয়াড়ের জেতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। অনেক ক্যাসিনোতেই মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি নিষিদ্ধ, কারণ এটি সত্যিই প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তবু ছোট পরিসংখ্যানিক সম্ভাবনা আছে যে কোনো একটানা দীর্ঘ হারে ভুল ফলাফল আসতেই পারে, যদিও সেটি অত্যন্ত বিরল।
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে মার্টিঙ্গেল টেবিল
বাইনারি অপশনে (Binary Options) সাধারণত সঠিক পূর্বাভাসে ১০০% রিটার্ন পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময়ে ৬৫% থেকে ৯৫% পর্যন্ত পেআউট অফার করে থাকে ব্রোকাররা। সেই কারণে এখানে মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি ব্যবহার করার সময় পেআউটের শতাংশের ওপর ভিত্তি করে আপনার ঝুঁকি ও সম্ভাবনা অনেকখানি বদলে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ৭৫% রিটার্ন পান, তাহলে মার্টিঙ্গেল অনুযায়ী হার বৃদ্ধির টেবিলটি হবে এ রকম:
বিড | 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 |
ট্রেডের পরিমাণ | 1 | 2,33 | 5,44 | 12,70 | 29,64 | 69,16 | 161,38 | 376,56 | 878,65 | 2050,18 |
মোট বিট পরিমাণ | 1,00 | 3,33 | 8,78 | 21,48 | 51,12 | 120,29 | 281,67 | 658,24 | 3587,06 | 3587,06 |
সঠিক পূর্বাভাসে লাভ | 0,75 | 1,75 | 4,08 | 9,53 | 22,23 | 51,87 | 121,04 | 282,42 | 658,99 | 1537,63 |
নেট মুনাফা | 0,75 | 0,75 | 0,75 | 0,75 | 0,75 | 0,75 | 0,75 | 0,75 | 0,75 | 0,75 |
টেবিল থেকে বোঝা যায়, পেআউটের হার যত বেশি হয়, মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কমে। যেমন, ৯৫% পেআউটের ক্ষেত্রে ১০ম ধাপে বাজি $৬৪৭ পর্যন্ত হতে পারে (মোট ঝুঁকি প্রায় $১২৬০), যেখানে সঠিক পূর্বাভাসে নেট লাভ মাত্র $০.৯৫। এত বড় অঙ্কের ঝুঁকি নিয়ে সামান্য লাভ—ধারণা করা যায়, এটি কতটা অস্থিতিশীল পদ্ধতি। আর যদি ১০ম ট্রেডও লোকসান হয়ে যায়?
মার্টিঙ্গেল ও অনলাইনে হার বৃদ্ধি: বাইনারি অপশনের জন্য রেট ক্যালকুলেটর
আপনি যদি নিজে নিজে মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি অনুযায়ী হার হিসেব করতে না পারেন, তবে নিচের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারেন:
বাইনারি অপশনের জন্য মার্টিঙ্গেল হারের সূত্র
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে সব ট্রেডই আগেভাগে হিসেব করা থাকে। কাজেই এখানে একটি নির্দিষ্ট গণনাসূত্র বিদ্যমান, যা আমরা এখন ব্যাখ্যা করব:
S = X + Y/K
S – পরবর্তী মার্টিঙ্গেল ট্রেডের প্রয়োজনীয় অঙ্ক
X – মার্টিঙ্গেল সিস্টেমে প্রথম ট্রেডের অঙ্ক
Y – পূর্ববর্তী সব ট্রেডের সমষ্টি
K – সঠিক পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে শতকরা লাভের হার (পেআউট)
ধরা যাক, প্রথম বিনিয়োগ $1000 এবং অ্যাসেটের রিটার্ন 80%, তাহলে এই সূত্র অনুযায়ী মার্টিঙ্গেলের ধাপগুলো হবে:
- ১ম ট্রেড = $1000
- ২য় ট্রেড = 1000 + 1000 / 0.8 = $2250
- ৩য় ট্রেড = 1000 + 3250 / 0.8 = $5062.50
- ৪র্থ ট্রেড = 1000 + 8312.50 / 0.8 = $11390.63
- ৫ম ট্রেড = 1000 + 19703.13 / 0.8 = $25628.91
- ৬ষ্ঠ ট্রেড = 1000 + 45332.03 / 0.8 = $57665.04
- ৭ম ট্রেড = 1000 + 102997.07 / 0.8 = $129746.34
- ৮ম ট্রেড = 1000 + 232743.41 / 0.8 = $291929.26
- ৯ম ট্রেড = 1000 + 524672.67 / 0.8 = $656840.84
- ১০ম ট্রেড = 1000 + 1181513.50 / 0.8 = $1477891.88
এই সিরিজের যেকোনো এক ট্রেড যদি সঠিক পূর্বাভাসে লাভ দেয়, তাহলে আগের সমস্ত লোকসান পুষিয়ে যাবে, সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ধার্য করা $800 লাভ হাতে থাকবে। এই সূত্র একজন ট্রেডারের ঝুঁকিকে তুলনামূলক কম রাখতে সহায়তা করে।
কিন্তু অনেক ট্রেডারই ভিন্ন একটি সূত্র ব্যবহার করেন:
S = X * K
যেখানে:
S – পরবর্তী মার্টিঙ্গেল ট্রেডের পরিমাণ
X – পূর্ববর্তী মার্টিঙ্গেল ট্রেডের পরিমাণ
K – যে গুণক দিয়ে আগের ট্রেডের পরিমাণকে গুণ করা হয়
প্রতিটি পেআউট রেশিওর জন্য আলাদা গুণক নির্ধারিত থাকে। নিচের টেবিলে বিভিন্ন পেআউট হার অনুযায়ী গুণক দেওয়া হল:
সঠিক পূর্বাভাসের পেআউট (%) | 0,5 | 0,55 | 0,6 | 0,65 | 0,7 | 0,75 | 0,8 | 0,85 | 0,9 | 0,95 |
প্রয়োজনীয় গুণক | 3,01 | 2,9 | 2,7 | 2,6 | 2,5 | 2,35 | 2,26 | 2,19 | 2,12 | 2,06 |
এভাবে প্রতিটি ধাপে আগের চেয়ে দ্রুত হারে টাকা বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ৭৫% পেআউটের ক্ষেত্রে, ১০ম ধাপে প্রায় $২০০০ এর বেশি ট্রেড করতে হতে পারে এবং মোট বিনিয়োগ প্রায় $৩৮০০ ছাড়িয়ে যায়। এত বড় মূলধন না থাকলে, এই পদ্ধতিতে ট্রেড কার্যত অসম্ভব।
বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল সিস্টেম ও হার বৃদ্ধির পদ্ধতি কীভাবে ব্যবহার করবেন
অধিকাংশ ক্ষেত্রে, মার্টিঙ্গেল বা হার বৃদ্ধির পদ্ধতি প্রাথমিক পর্যায়ের ট্রেডাররা ব্যবহার করেন। কারণ তাত্ত্বিকভাবে, মাত্র একটি সঠিক পূর্বাভাস হলেও আগের লোকসানগুলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
অন্তত তাদের কাছে সেটাই মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে ৯৯.৯৯৯% ক্ষেত্রে দেখা যায়, ট্রেডারের অ্যাকাউন্টে এত বড় মূলধন থাকে না যে ক্রমান্বয়ে হার দ্বিগুণ বা তার বেশি বাড়াতে পারে। আপনি আগের টেবিলগুলোতেও দেখেছেন, দরকারি অঙ্কগুলো কত দ্রুত আকাশচুম্বী হয়ে যেতে পারে।
বেশিরভাগ নতুন ট্রেডারই মার্টিঙ্গেলকে সবখানে প্রয়োগের চেষ্টা করেন:
- এলোপাতাড়ি ট্রেডিং (হয়তো ভাগ্য খুলে যাবে!)
- কোনো কৌশল ধরে ট্রেডিং (একসময় তো লাভ হবেই, তাই না?)
- নানা ট্রেডিং স্ট্রাটেজিতে সংযুক্ত
- সংবাদভিত্তিক ট্রেডিং
- কখনও কখনও রীতিমতো মুদ্রা ছুঁড়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা!
দুঃখজনকভাবে, এসব পন্থায় অধিকাংশ সময়ই তারা হারায়। অভিজ্ঞ ট্রেডাররা বরং ফিক্সড হারে ট্রেড করে ধাপে ধাপে লাভের চেষ্টা করেন, যখন নবীনরা মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে সবকিছু হারায়। এর পেছনে বড় কারণ হল, ছোট তহবিল নিয়ে বড় বড় লোকসান পুষিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
একসময় আমিও ভাবতাম মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি হল সেই চাবিকাঠি যা যেকোনো বাইনারি অপশন ব্রোকারকে (Binary Options Broker) দেউলিয়া করে দিতে পারে। কিন্তু পরে বুঝেছি, এভাবে বাজার চলে না।
শুরুতে অনেক নবীন ট্রেডারের মধ্যেই “আমি অল্পতেই লাখপতি হব” আর “আমি কিছুই শিখিনি” এই দুই ভাবনা কাজ করে। মার্টিঙ্গেল ব্যবস্থায় দেখা যায়, যেদিন লাভ হয় সেদিন “আমি সফল,” আর যেদিন লোকসান হয় পুরো আমানত শেষ—মধ্যখানে সামঞ্জস্য থাকে না।
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে বড় সমস্যা হল, এটি থেমে যাওয়ার সুযোগ দেয় না। হয় আপনি একেবারেই শুরু করবেন না, নয়তো শেষ বিন্দু পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন। একবার মার্টিঙ্গেলে ঢুকে পড়লে, “শেষ ট্রেডে সব ফেরত” পাওয়ার আশায় বারবার ঝুঁকির পরিমাণ বাড়তেই থাকে।
আমি নিজেও এভাবে একসময় বড় ধরনের মানসিক চাপে পড়েছিলাম; কিছুদিন আমি এত ভয় পেতাম যে ট্রেডই করতে চাইতাম না। কারণ বড়সড় একটি লোকসানি সিরিজ আপনাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করতে পারে।
যে মূল প্রলোভন কাজ করে, তা হল, “যেকোনো সময় মাত্র একটি লাভজনক ট্রেড আগের সব ক্ষতি ফিরিয়ে দেবে।” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে এমন সমীকরণ সবসময় মেলে না। বাজারের চালচিত্র অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়।
পরিসংখ্যানগতভাবে, দীর্ঘ সময় একই ফলাফল (জয় বা পরাজয়) দেখা যাওয়া অস্বাভাবিক, ঠিকই। তবে ট্রেডিং শুধুই একটি পাশা-নিক্ষেপ বা কয়েন-টস নয়; এখানে মার্কেটের নানাবিধ বিশ্লেষণ, সংবাদের প্রভাব, মনস্তাত্ত্বিক চাপ—সব কিছু কাজ করে। তাই মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি জুয়ার জগতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও ট্রেডিংয়ে এর ফলাফল এত সরল নয়।
মার্টিঙ্গেল ব্যবস্থাও ঠিক এইভাবেই কাজ করে—আগেই টেবিলে দেখানো সম্ভাবনার হিসেব অনুযায়ী আমরা ভাবি, পরবর্তী ট্রেড নিশ্চয়ই লাভ দেবে। কিন্তু বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে বাস্তবতা আরও জটিল।
কেন মার্টিঙ্গেল সিস্টেম ও হার বৃদ্ধি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে কার্যকর হয় না
“বাজার আপনার বিরুদ্ধে যত দীর্ঘ সময়ে যেতে পারে, আপনার কাছে এত দীর্ঘ সময়ের মূলধন নেই!” - এটি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে (Binary Options Trading) মার্টিঙ্গেল বা হার বৃদ্ধির পদ্ধতি কাজ না করার অন্যতম প্রধান কারণ। চলুন দেখে নেওয়া যাক।
বাজার (দামের গতি) বহু মিলিয়ন ভেরিয়েবলের ফলাফল:
- কোনো ব্যাংক কোনো অ্যাসেট কিনেছে বা বিক্রি করেছে
- কোনো বড় অংশগ্রহণকারী শেয়ারে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (অথবা উল্টোটা, অর্থ তুলে নিয়েছে)
- বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীরা (Smart Money) স্টপ অর্ডার নক আউট করছে
- কোনো অপ্রত্যাশিত খবরের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দাম সরিয়ে নিয়েছে
এছাড়াও এমন কিছু ঘটনা আছে যা কোনো পূর্বাভাস বা হিসাব দিয়ে অনুমান করা যায় না—“দাম নিজে যা চায়, তাই করে!” মূলত, দাম আপনার ইচ্ছেমতো নড়াচড়া করার বাধ্যবাধকতা রাখে না—আপনার চাওয়া বা না-চাওয়া তার কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। আপনি চাইলে এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বাজারের গতিমুখের সঙ্গে ট্রেড খুলতে পারেন, অথবা মেনে না নিয়ে একের পর এক লোকসান বরণ করতে পারেন।
কোথাও জর্জ সোরোস বলেছেন, “আপনি সঠিক না ভুল, সেটা বড় বিষয় নয়। আসল কথা হল, আপনি ভুল হলে কতটা ক্ষতি হচ্ছে আর আপনি সঠিক হলে কতটা লাভ হচ্ছে।” হার বৃদ্ধির পদ্ধতিতে, সঠিক হলে আপনি খুব সামান্যই লাভ করেন, কিন্তু একবার ভুল হলে সবকিছু হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
আপনি কত ঘন ঘন ভুল করেন? মার্টিঙ্গেল বা হার বৃদ্ধির কৌশল ব্যবহার করলে, ভুল কিন্তু বারবারই আসতে পারে! একজন ট্রেডার কেবল তখনই আয় করতে পারবেন, যখন তার পরবর্তী দিনে ট্রেড করার মতো মূলধন হাতে থাকবে। যদি আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকে, তবে সুযোগ থাকলেও আপনার কোনো কাজেই আসবে না।
কোনো ট্রেডিং কৌশলই ১০০% সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারে না—দৈবক্রমে ভুলের সম্ভাবনা সব সময়ই থাকে। আপনি ভাবতে পারেন, “সম্ভাবনা খুবই কম।” সংখ্যায় হয়তো কম দেখাতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এই সামান্য সম্ভাবনাই মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের আমানত শেষ করে দেয়।
ধরুন এমন একটি ট্রেডিং স্ট্রাটেজি আছে যা ১০ বছর ধরে দেখিয়েছে, ১০০টি ট্রেডের মধ্যে ৮০টি লাভে বন্ধ হয়েছে। তবুও কোনো নিশ্চয়তা নেই যে কোনো একসময় পরপর ২০টি লোকসানি ট্রেড হবে না, তারপর পরবর্তী ৮০টি লাভে শেষ হবে। পরিসংখ্যান ঠিকই থাকবে—৮০% সাফল্য—কিন্তু এই ট্রেডগুলোর ক্রমানুসার অজানা। সেই দীর্ঘ লোকসানি ধারাবাহিকতা সহজেই একজন বাইনারি অপশন ট্রেডারের সব টাকা শেষ করে দিতে পারে।
নতুন ট্রেডাররা সাধারণত মুনাফার চিন্তায় বিভোর—“এখন আমি $82 হাজারের একটি ডিল খুলব, সঠিক হলে প্রায় $75 হাজার লাভ, যা আজকের আগের সব ক্ষতি পুষিয়ে দেবে।” আর অভিজ্ঞ ট্রেডার পুরো অন্যভাবে ভাবে—“আজ কিছু লোকসান হয়েছে, আরেকটি ট্রেডও যদি বিপরীতে যায়, তাহলে কী করব? এই অবস্থায় থেমে যাওয়া উচিত নয় কি?” এই পার্থক্যটা বোঝা জরুরি। নবীন ট্রেডাররা ভবিষ্যৎ বড় লাভের আশায় মাতাল হয়ে থাকে, আর অভিজ্ঞ ট্রেডার নিজের বর্তমান মূলধন রক্ষা নিয়েই বেশি ভাবেন।
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে আরেকটি ট্রেড করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন:
- যদি এই ট্রেডটিও লোকসানে যায়, তখন কী করবেন?
- যদি আপনার ব্যালেন্সে আরেকটি ট্রেড চালানোর মতো অর্থ না থাকে?
প্রত্যেকটি আলাদা লেনদেনের ফলাফল আগে থেকে কেউই জানে না! মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে, ক্যাসিনোর বিপরীতে, যত বেশি ট্রেড খোলা হয়, পরবর্তী ট্রেড লোকসানে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তত কমে যাবে—এমনটি ভাবা একেবারেই ভুল। এখানে স্রেফ সম্ভাব্যতা তত্ত্ব (Probability Theory) খাটে না।
প্রায় সবাই, যারা মার্টিঙ্গেল নিয়ে ট্রেড করেন, নিশ্চয়ই এই পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত:
- ১. ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা! দারুণ! ট্রেড ওপেন করি!
- ২. দাম অল্প পিছু হটল? ভয়ের কী আছে! মার্টিঙ্গেল দিয়ে আরও বড় হার খুলে লাভ করব!
- ৩. এখন দাম সাপোর্ট লেভেলে গিয়ে উল্টে যাবে, নিশ্চিত! তার আগেই আরেকটা ঊর্ধ্বমুখী ট্রেড খুলে রাখি!
- ৪. কী হল! ট্রেন্ড তো উল্টো দিকে চলছে। এবার ৪র্থ ধাপে হার বৃদ্ধি করি!
- ৫. ট্রেন্ড কি চিরদিন থাকবে নাকি? একটু পরেই তো উল্টে যাবে!
- ৬. দেখলাম তো, উল্টে যাচ্ছে, একটু সময় লাগছে শুধু। দুঃখের বিষয়, আমার ট্রেডটা অনেক উপরে সেট করা... কিন্তু আরেকটা ট্রেড তো খুলতেই পারি!
- ৭. আরেকটু পরেই নিশ্চিত উল্টে যাবে! এদিকে ৭ম মার্টিঙ্গেল ট্রেড ওপেন করি, দাম যদি আমার দিকে যায় তবে বিশাল লাভ!
- ৮. এবার আর পড়ার জায়গা নেই! যা আছে সব ঢেলে দিই! মাত্র ১৫ মিনিটেই মাসিক আয় হয়ে যাবে!
বোঝাই যাচ্ছে, এভাবে ট্রেড করলে শেষটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়:
বস্তুত, একটি ট্রেন্ড কখনো স্থায়ী হয় না সত্য, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে পারে যাতে করে হার বৃদ্ধির মাধ্যমে বিপরীত দিকে ট্রেড করা ট্রেডারদের সম্পূর্ণভাবে নিঃস্ব করে দেয়। আমাদের এই “এখনই সবকিছু পরিবর্তন হবে!” মনোভাবই আসলে ট্রেডিংয়ের ফলাফলকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। বাজারের কিছু ‘পরিবর্তন’ হওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং আমাদেরই দরকার আমাদের আগের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো।
আপনি যদি ভাবেন, কেবল ট্রেন্ডের বিপরীতে ট্রেড করলেই মার্টিঙ্গেল দিয়ে আমানত শেষ হবে, তাহলে ভুল ভাবছেন।
- ১. নিউজ প্রকাশিত হয়েছে—দাম উপরে উড়ল। আমি ঊর্ধ্বমুখী ট্রেড খুলেছি। অন্তত কিছুটা মুভমেন্ট ধরতে পারব!
- ২. পিছু হটে গেল দাম? এটা স্বাভাবিক। এবার হার বাড়িয়ে নিচের দিকে ট্রেড করি। কে জানত খবর এত তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যাবে?!
- ৩. হুম, দাম আবারও উপরে গেল। আগেরটার ফলস এলার্ম ছিল! কেন শুরুতে বুঝলাম না? এখন আবার উপরের দিকে ট্রেড খুলব। দাম নতুন শক্তি পেয়ে আরও উপরে উঠবে!
- ৪. আবার পিছু হটা?! এবার তো নিশ্চিত নিচের দিকে ট্রেড খোলা উচিত—দাম আর উপরে যেতে পারবে না!
- ৫. ওহো! দাম আগের রেসিস্ট্যান্স ভেঙে দিল! এখন উপরে ওঠার পথে আর কিছু বাধা নেই! চলুন হার বাড়াই!
- ৬. আবার পিছু হটা কেন? লেভেল ফেইক ব্রেকআউট? সাপোর্ট আর রেসিস্ট্যান্সের ওপর ক্যানডেল আটকে রাখতে পারল না? ঠিক আছে, দাম পড়লে অন্তত কিছু টাকা বানাতে পারব...
- ৭. দেখলেন তো, দাম আবারও উপরের দিকে গেল!!! বলছিলাম!!! কেন নিজেকে আগেই শুনিনি? ঠিক আছে, এবার আর দেরি নয়—মার্টিঙ্গেল করে উপরের দিকে। সব ক্ষতি ফিরিয়ে আনব!
- ৮. একি বাজে কথা! এই পিছু হটা এল কোথা থেকে??? এটা কি ডাউনট্রেন্ড নাকি? আগের উচ্চতা ভেঙে দিয়ে আবার পড়ে গেল কেন! ঠিক আছে, এবার অন্তত বড় ধরণের লাভ তুলব! মানুষ বলে আমি নাকি ট্রেড করতে জানি না!
- ৯. আআআ!!! আমার টাকা কোথায় গেল!!! এটা কীভাবে সম্ভব! এই দোষী দামই সমস্ত কিছু নষ্ট করল!!! আমি তো সঠিক কাজটাই করেছিলাম!!!
এরকম পরিস্থিতির সংখ্যা হাজারও হতে পারে, কিন্তু সারমর্ম এক—মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি ব্যবহার করা মানে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। অনেক বাইনারি অপশন ব্রোকার নিজেরাই এই ট্রেডিং পদ্ধতি ছড়িয়ে দেয় যেন এটি “সবচেয়ে কার্যকর” বা “অসাধারণ লাভজনক” কোনো নিয়ম। উদাহরণস্বরূপ, কখনো একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া বাইনারি অপশন ব্রোকার Verum Option তাদের সাইটে “লাভজনক” কৌশল হিসাবে মার্টিঙ্গেলকে অন্তর্ভুক্ত করে নিবন্ধ পোস্ট করতে রাজি হয়েছিল:
হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে বহু ট্রেডার মার্টিঙ্গেল ব্যবহার করে, কিন্তু ফলাফল হল ৯৫% ট্রেডার তাদের টাকা হারায়, এবং বেশ দ্রুতই। তাহলে ব্রোকার কেন এমন পদ্ধতি প্রচার করবে যা নাকি তাকে বিরাট ঝুঁকিতে ফেলতে পারে?! উত্তর নিজেই ভাবুন। সত্যি যদি হার বৃদ্ধি পদ্ধতিটি এত লাভজনক হত, তাহলে তো সব বাইনারি অপশন ব্রোকারই (Binary Options Broker) তা নিষিদ্ধ করে রাখত। কিন্তু না, তারা বরং পছন্দ করে যে আপনি নিজের ইচ্ছায় একেবারে নিঃস্ব হয়ে যান!
বাইনারি অপশনে বাজি বৃদ্ধির পদ্ধতি ও মার্টিঙ্গেল কৌশল কাদের জন্য উপকারী
এবার দেখা যাক, ৯৫% ট্রেডার লোকসান করে, ৫% লাভ করে—এই চিত্র বহুদিন ধরেই জানা। আগেই বলেছি, নতুন ট্রেডাররা প্রায়ই মার্টিঙ্গেল ব্যবহার করে। কেন করে?
কারণ তাদের মাথায় সঠিক ট্রেডিং জ্ঞান থাকে না, আর তারা সেটা পূরণ করতে “চারপাশের মানুষের জ্ঞান” বা ইউটিউব দেখে। এলোমেলোভাবে কোনো ইউটিউব চ্যানেল খুলে দেখুন—অনেক “গুরু-ট্রেডার” প্রথমেই মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে ট্রেড শেখাতে শুরু করবে।
এরপর তারা বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলবে, “এই পদ্ধতিতে ট্রেড করলে আপনি সর্বদাই লাভে থাকবেন।” ফলে নতুনদের ফাঁকা মাথায় এটা গেঁথে যায়। একে যুক্তি দিয়ে হারানো কঠিন, কারণ:
- পরপর লোকসানের শৃঙ্খল চিরদিন থাকবে না
- একটি লাভজনক ট্রেড আগের সব লোকসান ফিরিয়ে দেবে
কিন্তু এই “গুরু”রা কখনোই বলে না যে:
- ঝুঁকি এত বেশি যে সম্ভাব্য মুনাফার তুলনায় সেটি তেমন যুক্তিযুক্ত নয়
- অনন্তকাল পরপর লোকসান হয় না, তবে কখনো এত দীর্ঘ লোকসানি হতে পারে যে আপনার তহবিল শেষ হয়ে যাবে, আপনি আর ট্রেড অব্যাহত রাখতে পারবেন না
- একটি লাভজনক ট্রেড আপনার সব ক্ষতি ফিরিয়ে দেবে, যদি সেটি সত্যি লাভজনক হয়। নাহলে আপনার আমানত শূন্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি
উল্টো দিকে, সর্বত্র প্রচার চলতে থাকে যে এই অর্থ পরিচালনার পদ্ধতি কতটা লাভজনক। তার ওপর তারা আপনার সামনে “কর্মপদ্ধতি” দেখায়—“এখানে সবচেয়ে সহজ কৌশল! মার্টিঙ্গেল নিয়ে নিন, আগের ক্যান্ডেল যেদিকে শেষ হয়েছে সেই দিকে ট্রেড খুলুন! ক্যান্ডেল সবুজ? তাহলে ক্রয় (Up)! লাল? তাহলে বিক্রয় (Down)! পূর্বাভাস ভুল হলে? রেট দ্বিগুণ করে আরও ট্রেড করুন! ব্যস! লক্ষ লক্ষ ডলার শোভেল দিয়ে তুলুন!”–তারপর কোটি কোটি ভীত-লোভী মানুষ এই ফাঁদে পড়ে যায়। আমার খারাপ লাগছে, কিন্তু সত্যিই আমি অন্যভাবে বলতে পারছি না।
মজার বিষয় হল, আগের ক্যান্ডেলের দিকে দেখে ট্রেড করা আসলেই সম্ভব, কিন্তু অভিজ্ঞ কারও হাতে এটা সাময়িকভাবে কাজও করতে পারে। কারণ সে কখন, কেন, কী অবস্থায় এটা করবে তা জানে এবং পুরো ট্রেডিং ব্যালেন্স ঝুঁকিতে ফেলবে না।
কিন্তু সাধারণ ট্রেডার, যারা মার্টিঙ্গেল আর হার বৃদ্ধি পদ্ধতির ভক্ত, অতি লোভের বশে সহজেই পরপর কয়েকটি লোকসানি ট্রেডের মুখে পড়ে:
উপরের উদাহরণে, মাত্র ৮টি লোকসানি ট্রেড পরপর ঘটেছে, ৯মটি লাভে শেষ হয়েছে। এমন একটি উদাহরণ খুঁজে পেতে আমার মাত্র ১৫ সেকেন্ড লেগেছে। ভাবুন তো, ৯ম ধাপে পৌঁছানোর মতো টাকা কি আপনার ট্রেডিং ব্যালেন্সে আছে? $১ দিয়ে শুরু করলে ৯ম বিডে প্রায় $৮৭৮ চাই (সাথে ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে মোট $৩৬০০ থাকা প্রয়োজন), তাও ৭৫% রিটার্নের শর্তে। এর সবটাই করে আপনি পেতে পারেন মোটে ১ ডলার লাভ—যা দিয়ে এখন একটা চিউইংগাম কেনাও কঠিন!
যদি $৫ বা $১০ দিয়ে শুরু করতেন? নিশ্চিতভাবেই ৫ম বা ৬ষ্ঠ ধাপে পৌঁছানোর আগেই আপনার জমা টাকা শেষ হয়ে যেত। আর সাধারণত কারা মার্টিঙ্গেল ব্যবহার করে? যারা অতি লোভী, ভাগাভাগি করতে রাজি নয়। আমি নিজেও একসময় এমন ছিলাম—কোনোভাবেই ব্রোকারকে কিছু দিতে চাইতাম না। কিন্তু আসুন আবার মূল কথায় ফিরি।
আমি নানা সূত্রে বহু ট্রেডারদের অভিজ্ঞতার কথা শুনি, আবার তার চেয়ে অনেক বেশি দেখি যারা এখনো নিজের অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারেনি। ওরা অন্যের ওপর নির্ভর করে—“সংকেত (Signal) দাও! তুমি তো ট্রেড করতে জানো! আমাকে সংকেত দাও, আমি আর কিছু চাইব না! একটু কষ্ট হবে নাকি! না দেবে? তাহলে তোমার বদনাম করব!”
ব্যক্তিগতভাবে আমি সংকেত শেয়ার করা পছন্দ করি না—একজন ট্রেডারকে নিজেকেই ট্রেড করতে হবে, কারণ সব দায়দায়িত্বও তাহলে তার ওপর পড়ে। যাই হোক, সংকেতের প্রসঙ্গে আসি। এখন অনেক সিগন্যাল-সেবা আছে—একবার থুতু ফেললে ডজনখানেক সিগন্যাল-প্রোভাইডার পেয়ে যাবেন। তারা সবাই মার্টিঙ্গেলসহ নানা “কূট-বুদ্ধিতে” আপনাকে শেখাবে:
- এই তো Olymp Trade—তোমার নতুন ব্রোকার!
- এই লিঙ্ক দিয়ে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে, না হলে সংকেত পাবে না!
- এখন বড়সড় অঙ্কে জমা কর! একটু বেশিই কর!
- ঠিক আছে, সংকেতের জন্য অপেক্ষা কর!
- একি! সংকেত মিস হয়েছে? ৯ম ধাপে মার্টিঙ্গেল এন্ট্রি দিলে পেতে!
- ওহ, জমা টাকা কম ছিল? এটা তোমার সমস্যা! আর টাকা আনো!
- তুমি বলছ সংকেতগুলো খারাপ? হ্যাঁ, খারাপ বটে, কিন্তু সবাইকে জানালে চলবে না—চুপ করে থাক! নাহলে তোমাকে ব্ল্যাকলিস্ট! সত্য বলে আমাদের ক্ষতি করছ কেন!
যারা ব্যাপারটা জানে না, তাদের বলি—প্রথম থেকেই আপনাকে এমন পথে নিয়ে যাওয়া হয় যে, পরে আপনার অর্থ ব্রোকার আর সংকেতদাতা ভাগ করে নেয়। আপনার আয় নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না—আপনিই সংকেতের পেছনে গেছেন, কাজেই প্রায়শই আপনার টাকা ভাগাভাগি হবে আর আপনাকে কোনো অংশ দেওয়া হবে না।
সিগন্যাল গ্রুপ বা সিগন্যাল সার্ভিসে ঢুকলে আপনাকে প্রায়ই মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে ট্রেড করতে বাধ্য করা হয়। সংকেতগুলো এমনভাবে আসে যে, মার্টিঙ্গেল ছাড়া তেমন সুযোগ থাকে না:
- এটা সংকেত—ট্রেড কর!
- দাম উল্টোদিকে যাচ্ছে—হার বাড়িয়ে ওপেন কর!
- ওই একই সংকেতে তৃতীয় বিড!
- আগের সংকেত ঢোকেনি, তাই ৪র্থ ধাপে মার্টিঙ্গেল দিয়ে আবার ট্রেড!
এইভাবে অনির্দিষ্টকাল চলতে থাকে, যতক্ষণ আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা থাকে। এখন কথা হল, যেসব “গুরু ট্রেডার” ভিডিও বানায়, তারা কেন বারবার এই কৌশল দেখায়?
অবশ্যই সব ভিডিওতেই এরা লাভের গল্প দেখায়—চমৎকার, ঝকঝকে! কেউ কেউ তো বিদ্রূপ করে বলে—“এই যে, মার্টিঙ্গেল দিয়ে ১০ মিনিটে বার্ষিক বেতন সমান ইনকাম করা যায়! যদি এত বড় ট্রেড করার সাহস (ডিম!) না থাকে, তবে যাও রাস্তা ঝাড় দাও অথবা কুকুরের ময়লা পরিষ্কার কর! আর আমি ইতিমধ্যে কোটিপতি হয়ে যাব!” এমন কথাই সত্যি শুনেছি। আমি এমন একজন “গুরু”র ভিডিওর বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম—সেখানে মার্টিঙ্গেল ব্যবহার করে প্রায় তার পুরো ব্যালেন্স হুমকির মুখে চলে গিয়েছিল।
কিন্তু ট্রেডগুলো যদি কার্যকর না হত এবং সমস্ত টাকা উবে যেত? সেটা তো কেউ দেখায় না। কারণ এটা দেখালে কী আর বিজ্ঞাপন থাকবে—মাত্র কয়েক মিনিটে $১০০,০০০ হারানোর ভিডিও কজন দেখতে চাইবে! সুতরাং এইসব “গুরু ট্রেডাররা” লোকসানের ভিডিও দেখায় না, বরং এমন এক নিখুঁত দৃশ্যের জন্ম দেয়—ট্রেডিং খুব সহজ ও সবসময় লাভজনক, শুধু মার্টিঙ্গেল ব্যবহার করুন, আর দেখবেন তহবিল গুড়িয়ে গিয়েছে!
যদি আপনাকে শুধু লাভের দিকটাই দেখানো হয়, তাহলে বুঝে নিন আপনার কাছ থেকে কিছু গোপন করা হচ্ছে! ট্রেডিংয়ে সর্বদা লাভ থাকা অসম্ভব—অনিবার্যভাবে কিছু দিন বা কিছু ট্রেডে লোকসান আসবেই। প্রতিটি ট্রেডারেরই এমন দিন যায়, অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে না—বাজারের নিজস্ব অবস্থাই এমন।
সুতরাং, কে লাভবান হচ্ছে আপনাকে মার্টিঙ্গেল বা বাজি বৃদ্ধির মতো আপাত “সুন্দর” কিন্তু বাস্তবে অর্থ-নষ্ট করার কৌশল শেখানোর মাধ্যমে? আমরা আগের অভিজ্ঞতাগুলো থেকে শিখে জানি, বহু “গুরু” আছে যারা ব্রোকারের পক্ষে কাজ করে বা তাদের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন সহায়তা পায়। তারা আপনাকে আশার কথা শুনিয়ে বলবে, “মার্টিঙ্গেল দিয়ে বাইনারি অপশনে (Binary Options) ট্রেড করুন, নিশ্চিত লাভ!” বাস্তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাউন্ট শূন্য হতে বেশি সময় লাগে না।
তবে শুধু এটুকুই নয়—আরো একটা শ্রেণি আছে যারা ব্লগার হলেও ব্রোকারের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু তারা এতটাই “অভিজ্ঞ” যে, নিজেরাও ঠিকমতো না জেনেই অন্যকে শিক্ষা দিতে শুরু করে। হয়তো তারা তাদের মতামত প্রকাশ করতে চায়, সেটি ভুল হলেও। আপনি গ্রহণ করবেন কি না, সেটা আপনার ওপর। আমার মতে, যে ব্যক্তি নিজেই ট্রেডিংয়ের মৌলিক বিষয় বোঝেনি, সে অন্যকে অর্থ আয়ের পথ দেখাতে পারে না! যেন, “আপনার অর্থনীতি-শিক্ষকই যদি কোটিপতি না হন, তাহলে উনি কী শিখাবেন?!”
প্রকৃতপক্ষে, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী মানুষের কথা শোনা জরুরি, যারা বাস্তবে শিখে ও অনুশীলনের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, চারপাশে অনেক অজ্ঞ ও “গুরু” ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাদের একমাত্র লক্ষ্য আপনার কাছ থেকে অর্থ আদায় করা!
কেন ট্রেডাররা বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল ও হার বৃদ্ধি পদ্ধতিতে ট্রেড করে আমানত হারায়
ট্রেডিং মূলত চারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত:
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বা মানি ম্যানেজমেন্ট – মোট ট্রেডিং সাফল্যের প্রায় ৩০%
- ট্রেডিং মনস্তত্ত্ব (Psychology) – প্রায় ৩০%
- ট্রেডিং ডিসিপ্লিন – প্রায় ৩০%
- ট্রেডিং স্ট্রাটেজি – বাকি প্রায় ১০%
চলুন একে একে ব্যাখ্যা করি।
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে মার্টিঙ্গেল সিস্টেম ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ম
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বা মানি ম্যানেজমেন্ট কী? এটি আপনার ট্রেডিং মূলধন ব্যবস্থাপনার একটি পদ্ধতি, যেখানে লোকসান নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এবং সম্ভাব্য লাভ বাড়ানোর উপায় ঠিক করা হয়। বহু বছরের অভিজ্ঞতা ও সহস্রাধিক সফল ট্রেডারের পরীক্ষিত নিয়ম দিয়েই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ভিত্তি গড়ে উঠেছে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র এক—“যেখানে সম্ভব অল্প হারান, আর বাজার সুযোগ দিলে যতটা সম্ভব বেশি উপার্জন করুন।” এর কিছু মৌলিক নিয়ম হল:
- প্রতি ট্রেডে ট্রেডিং ব্যালেন্সের ১-২% বিনিয়োগ করুন। সর্বোচ্চ ৫% পর্যন্ত নিতে পারেন
- পরপর ৩-৫টি লোকসানি ট্রেড হলে সেদিনের মতো থেমে যান
- সবসময় নির্দিষ্ট হার (Fixed Rate) ব্যবহার করুন
- অবশ্যই একটি লোকসান সীমা (Loss Limit) রাখতে হবে
- নিজের জন্য একটি লাভের লক্ষ্য (Profit Limit) ঠিক করে নিন
ট্রেডিং ব্যালেন্সের ১-২% দিয়ে ট্রেড করলে পরপর কয়েকটি লোকসানি ট্রেড হলেও বড় ধরনের ক্ষতি হবে না, আর আপনার মনস্তত্ত্বে বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাবও ফেলবে না (এটা আমরা একটু পরেই আরও বিশদে বলব)।
পরপর ৩-৫টি ট্রেড লোকসানে গেলে বোঝা যায়, বাজারে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে বা আপনার বিশ্লেষণে সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে আরও লোকসান করার দরকার নেই—থেমে যান। পরের দিন নিশ্চয়ই নতুন সুযোগ আসবে।
ফিক্সড রেটে ট্রেড করা মানে আপনি সবসময় নিয়ন্ত্রিতভাবে এগোন। এতে আপনার সম্পূর্ণ অ্যাকাউন্ট শেষ করে দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, আর মনের ওপর চাপও কমে।
লোকসান সীমা রাখার অর্থ হল, যদি ক্ষতি হতে থাকে তাহলে একটা সময়ে গিয়ে আপনাকে থামতে হবে, যেন আপনার ব্যালেন্স পুরো শূন্য না হয়ে যায়।
একইভাবে, লাভের একটা সীমা রাখাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত ট্রেড করতে করতে লাভ তো বাড়েই না, উল্টো আবেগ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আবার লোকসানে পড়ার আশঙ্কা থাকে। নির্দিষ্ট সংখ্যক ট্রেডের সীমাও প্রায়ই কার্যকর—অতিরিক্ত ট্রেড থেকে দূরে রাখে।
এগুলো শুনতে কতটা যৌক্তিক, তাই না? এবার দেখুন মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি এই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকে কেমন দাঁড়ায়:
- ট্রেড ছোট অঙ্ক থেকে শুরু হলেও শেষমেশ পুরো ট্রেডিং ব্যালেন্সের ঝুঁকি তৈরি করে
- পরপর কয়েকটি লোকসানি ট্রেডের পরও ট্রেড থামে না—অবধারিতভাবে মুনাফা না পাওয়া পর্যন্ত বা তহবিল শূন্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে
- এখানে নির্দিষ্ট হার (Fixed Rate) বলতে কিছু নেই
- লোকসান সীমা বলতে আছে পুরো ট্রেডিং ব্যালেন্স
- লাভের সীমা বলতে “যা হোক একটু হলেও লাভ”
- ট্রেডের সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারিত হয় অ্যাকাউন্টে অবশিষ্ট টাকার ওপর
দেখুন, মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি মূলত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়মগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত। যেখানে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট মূলধন সুরক্ষার কথা বলে, সেখানে মার্টিঙ্গেল কৌশল যেন বলে “সব বা কিছুই নয়।”
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সঠিক নিয়ম মেনে চললে আপনি দীর্ঘমেয়াদে আয় করতে পারেন, অন্যথায় ক্রমাগত লোকসানে পড়তে থাকবেন। যারা নিজস্ব মূলধন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে জানে না, তাদের ট্রেডিংয়ে আসার তেমন কোনো মানে নেই!
বেট ইনক্রিমেন্ট সিস্টেম (মার্টিঙ্গেল) এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ট্রেডিং মনস্তত্ত্ব
মনে আছে, আমি বলেছিলাম মার্টিঙ্গেল ট্রেডিং আমার ট্রেডিং দক্ষতায় খুব শক্তিশালী এক “দাগ” রেখে গেছে। হ্যাঁ, ঠিক সেটাই ট্রেডিং মনস্তত্ত্বের সঙ্গে জড়িত।
ট্রেডিং মনস্তত্ত্ব ট্রেডারদের জন্য প্রয়োজন যাতে তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে পারে। সঠিকভাবে বললে, ট্রেড করার সময় আবেগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে রেখে দেওয়া, বা আরও স্পষ্টভাবে বললে, ট্রেডার যেন আবেগকে প্রভাব ফেলতে না দেয়। কেন প্রয়োজন? যাতে ট্রেডিংয়ে অপ্রয়োজনীয় কিছু জড়িত না থাকে।
আমি আমার শত্রুকে দেখেছি এবং সে আমার মধ্যেই! আমরা নিজেরাই ট্রেডিংয়ে সমস্যার প্রধান কারণ। কখনো ভেবেছেন—“ওহ, সেদিন যদি মাথা গরম না করতাম, সবকিছু অন্য রকম হত!” অথবা “রাগের মাথায় ট্রেড খুলেছিলাম—শান্ত হওয়ার পরই ট্রেড করা উচিত ছিল।” ঠিক যেমন রাগের বশে মানুষ অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত কথা বলে ফেলে, ট্রেডিংয়েও আবেগে তাড়িত হয়ে বিশ্লেষণহীন কাজ করা হয়।
ট্রেডিং মনস্তত্ত্ব ট্রেডারকে শেখায় কীভাবে সব ধরনের আবেগ থেকে মুক্ত থেকে কেবলমাত্র বিশ্লেষণ ও সংকেতের ওপর ১০০% মনোযোগ দেওয়া যায়।
ট্রেডারের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল ভয়। একজন ট্রেডার তার অর্থ হারানোর ভয়ে থাকে—কারণ সেই অর্থের ওপর সে বড় আশা করে। এই ভয় আমাদের বাস্তবতা বিচার করার ক্ষমতা হ্রাস করে, প্রায়ই হঠকারী সিদ্ধান্তে ঠেলে দেয়। কিন্তু ভয় কখন আসে? যখন আমরা আতঙ্কিত হই (এই তথ্যই নতুন!)। অন্যভাবে বললে, বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে আমরা তখনই ভয় পাই, যখন ট্রেডের পরিমাণ আমাদের সহনশীলতার চেয়ে বড় হয়ে যায়।
ট্রেড খোলার জন্য সাধারণত ভয় থাকে না—যেমন ডেমো অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ ডলারের ট্রেড করে ফেললেও কিছু যায়-আসে না। কিন্তু বাস্তবে নিজের টাকা হারানোর ভয়টাই বড়। যদি শুধু $১ বিনিয়োগ করেন, তখন সাধারণত ভয় কাজ করে না—কারণ আমরা প্রতিদিনই এর চাইতে বেশি অর্থ অহেতুক ব্যয় করি। কিন্তু আপনি যদি $১০ হাজারের ট্রেড ওপেন করেন, তখন অবশ্যই প্রতিটি প্রাইস মুভমেন্ট সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবেন, আর সেই মনস্তাত্ত্বিক চাপই হল ‘ভয়’।
শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, সমস্যার মূল হল আপনি কত টাকায় ট্রেড খুলছেন। মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি আপনাকে কী দেয়?
- ১ম বিড - ওহ, থাক, এটা সামান্য!
- ২য় বিড - উহ, এমন হয়েই থাকে!
- ৩য় বিড - এখন একটু সাবধান হতে হবে!
- ৪র্থ বিড - হয়ে যাক! মানসিক শক্তি সঞ্চয় করি!
- ৫ম বিড - আর মজার কিছু নেই!
- ৬ষ্ঠ বিড - উপরে নাকি নিচে? দাম কোথায় যাবে?
- ৭ম বিড - অন্তত লাভে তো গেল!
- ৮ম বিড - আরে, আরেকটু! চলো! উফ, কেন আবার লোকসান?! এটা কীভাবে সম্ভব!!!
- ৯ম বিড - কিন্তু তার জন্য আর টাকা নেই...
কয়েকটি ট্রেডের মধ্যে হার বাড়িয়ে নেওয়ার এই ধাপগুলো একটি ট্রেডারকে স্থিতিশীল অবস্থা থেকে চরম বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যায়। অনুমান করাই যায়, ৪-৫তম ট্রেডে (ট্রেডিং ব্যালেন্সের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে) বাজারের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করার মতো মানসিক অবস্থা আর থাকে না। তখন হয় সংযোগহীন ভাগ্যের ওপর নির্ভরতা, নয়তো সম্পূর্ণ আমানত হারানো।
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি ট্রেডারকে ফিক্সড রেটে ট্রেড করতে দেয় না, তাই সবসময় একই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান ধরে রাখাও সম্ভব হয় না। কোনো একটি ট্রেড লাভে বন্ধ হল—আনন্দ, উল্লাস, স্বস্তির নিঃশ্বাস। আর এটা চলতে থাকে যতক্ষণ না নতুন কোনো লোকসানি সিরিজ শুরু হয়, যা কেবল আগের লাভই কেড়ে নেয় না, পুরো ট্রেডিং ব্যালেন্সও শেষ করে দেয়। তখন দায়ী কে? আপনি নিজেই নিজের ওপর এটি ঘটতে দিয়েছেন, কাজেই দোষীও আপনি নিজেই!
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি ও বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ট্রেডিং ডিসিপ্লিন
ট্রেডিং ডিসিপ্লিন হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দক্ষতা, যা ট্রেডারকে নিজের ট্রেডিং প্ল্যান কঠোরভাবে মেনে চলতে সহায়তা করে:
- ট্রেডিং স্ট্রাটেজির নিয়ম ভঙ্গ না করা
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বা মানি ম্যানেজমেন্টের নিয়ম ভঙ্গ না করা
- যেখানে ট্রেড খোলার কথা নয়, সেখানে ট্রেড না খোলা
- ট্রেডিংয়ের প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা
ট্রেডিংয়ের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে একজন ট্রেডার সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না। যদি না পারে, তবে এটি আসলে একধরনের জুয়ার মতো হয়ে দাঁড়ায় এবং ফলাফল সাধারণত নেতিবাচক। আর যদি পেরে ওঠে, তাহলে প্রচুর অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে!
অনেকে হয়তো বলবেন, মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিও ট্রেডিং ডিসিপ্লিন গড়ে তোলে—প্রত্যেক লোকসানি ট্রেডের পর অবিলম্বে আরেকটি ট্রেড খোলা হয় বলে। আমি বলব, বন্ধু, এটি ডিসিপ্লিন নয়, বরং “হেরে যাওয়া পুষিয়ে নেওয়ার বাসনা” মাত্র।
ডিসিপ্লিন আসলে এমন এক মানসিক চর্চা, যার লক্ষ্য ট্রেডারকে ধারাবাহিকভাবে লাভজনক হতে শেখানো। কিন্তু যেখানে আজকের দিনে হার বৃদ্ধির মাধ্যমে আপনি লাভ করলে পরের দিনই সব শেষ হয়ে যেতে পারে, সেখানে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। সঠিক নিয়ম মানলে কখনই আপনার পুরো ব্যালেন্স উবে যাওয়ার কথা নয়।
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি উল্টোভাবে ট্রেডারের ডিসিপ্লিনকে দুর্বল করে:
- আবেগের বশে ট্রেডিং স্ট্রাটেজির নিয়ম অমান্য করা
- “পুষিয়ে নেওয়ার” বাসনায় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ম লঙ্ঘন করা
যদি একদিকে লাভজনক ট্রেডিং থাকে, তবে অন্যদিকে ১০০% মার্টিঙ্গেল ও হার বৃদ্ধি। কারণ এই পদ্ধতি ট্রেডিংয়ের মূল নিয়মগুলোকেই বিরোধিতা করে, যা আসলে ধারাবাহিক আয়ের পথ। ৯০% সাফল্য ধ্বংস হয়ে যায়, যখন আপনি শুধু নিজের টাকা না হারানোর বাসনায় হার বাড়াতেই থাকেন, শেষমেশ সবই হারিয়ে ফেলেন।
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি ও বাইনারি অপশনের ট্রেডিং স্ট্রাটেজি
এটি বেশ মজার বিষয়। কোথায় কিভাবে হার বৃদ্ধির (মার্টিঙ্গেল) পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়ে বহু বিতর্ক আছে। কখনো কখনো বিষয়টি হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
কিছু ট্রেডার আছেন যারা ১০,০০০% নিশ্চিত যে মার্টিঙ্গেল ব্যবহার করা যায়, কিন্তু শুধু তৃতীয় ধাপ (থ্রি নী) পর্যন্ত। সত্যিই কি তাই? দেখা যাক।
এটা হল ফিক্সড বিনিয়োগ পরিমাণে (একটি ট্রেডে $১, সঠিক পূর্বাভাসে ৭৫% রিটার্ন) তিনটি লোকসানি ট্রেডের উদাহরণ:
লেনদেন | 1 | 2 | 3 |
মোট লোকসান: -3$ | 1$ | 1$ | 1$ |
আর এটা হল হার বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনটি লোকসানি ট্রেডের উদাহরণ। প্রাথমিক বিনিয়োগ $১, সঠিক পূর্বাভাসে ৭৫% রিটার্ন:
লেনদেন | 1 | 2 | 3 |
চূড়ান্ত লোকসান: -8.87$ | 1$ | 2.35$ | 5.52$ |
ফলাফল:
- এক ডলারের তিনটি লোকসানি ট্রেড (ফিক্সড রেট) পুষিয়ে আনতে ৭৫% রিটার্নের শর্তে ৪টি লাভজনক ট্রেড লাগবে
- মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে লোকসানি সিরিজের অঙ্ক পুষিয়ে আনতে ৭৫% রিটার্নের শর্তে ১২টি লাভজনক ট্রেড লাগবে
অনেকেই হয়তো বলবেন যে তিনটি লোকসানি ট্রেড একসাথে তেমন বেশি হয় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন ট্রেডিং লাভজনক থাকে। চলুন পরীক্ষা করে দেখা যাক।
অনেক দূর যেতে হবে না। সাধারণ এক্সেল শীটে ট্রেডারের ট্রেডের কাল্পনিক ফলাফল তৈরির মাধ্যমে খুব সহজেই একটি নমুনা তৈরি করা যায়। পরবর্তী ডেটাগুলো ধরা হয়েছিল:
- ব্যবহৃত স্ট্রাটেজিতে লাভজনক ট্রেড ৬৫%
- মোট ১০০টি ট্রেড
- প্রাথমিক আমানত, অপশন রিটার্ন, বা ট্রেড বিনিয়োগের অঙ্ক আমরা ধরছি না—শুধু লাভলোকসানের ক্রমধারা গুরুত্বপূর্ণ
তারপর একটি র্যান্ডম নম্বর জেনারেটর ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করে। যদি সংখ্যাটি ৬৫-এর কম হয় (আমাদের ৬৫% সাকসেস রেট), তাহলে ট্রেডটি লাভজনক বলে ধরি, আর যদি ৬৫-এর বেশি হয়, তাহলে ট্রেডটি লোকসানি ধরি।
ফলাফল দেখুন:
স্ক্রিনশটে তিনটি জায়গা হাইলাইট করা আছে, যেখানে পরপর তিনটি লোকসানি ট্রেড হয়েছে। এখন হিসাব করা যাক:
মোট ১০০টি ট্রেড, এর মধ্যে ৯টি লোকসানি (৩টি সারিতে × ৩ ধাপ)। তাহলে বাকি থাকল ৯১টি ট্রেড, যার ভিত্তিতে আমাদের সব লোকসান পুষিয়ে নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ৩৬টি সঠিক পূর্বাভাস বা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ধারাবাহিক লাভ। এখানে দেখা গেছে ৩০টি ট্রেড প্রথম চেষ্টায় লাভে বন্ধ হয়েছে, আর বাকি ২৫টি সারি লাভে গিয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মার্টিঙ্গেল ধাপে। মোট নেট লাভ ১৯টি ট্রেডের সমান। একেবারে খারাপ নয়! চলুন আরেকবার দেখি।
এবার একই শর্তে দেখা গেল পরপর ৬টি লোকসানি সারি আছে। সুতরাং ৬টি সারি × ৩টি ট্রেড করে ১৮টি লোকসানি ট্রেড হয়। বাকি থাকে ৮২টি ট্রেড। এখানে হার পুষিয়ে আনতে ৬টি সারিতে ১২টি সফল ট্রেড (মোট ৭২টি) লাগবে। কিন্তু আমাদের কাছে রয়েছে মোট ৩৬টি সফল ট্রেড ও মার্টিঙ্গেল ২য় ও ৩য় ধাপে সফল সারি। তার মানে প্রয়োজনের অর্ধেকও পূরণ হয়নি—৩৬ ট্রেডের সমান লোকসান থেকেই গেল। আরেকবার দেখি।
এবারও ১০০টি ট্রেডের মধ্যে ৪২টি লোকসানি। ৩টি বা তার বেশি লোকসানি ক্রমান্বয়ে আছে ৪টি সারি। তাহলে ১০০ - ৪২ = ৫৮টি লাভজনক ট্রেড থাকল। এর মধ্যে ৪৮টি লাভজনক ট্রেড বা সারি লাগবে লোকসান পুষিয়ে আনতে। নেট লাভ থাকে ১০টি ট্রেডের সমান।
মোট ফলাফল:
- ৩০০টি ট্রেড
- ৬৫% গড়ে সাকসেস রেটের একটি স্ট্রাটেজি ব্যবহার করলে নেট লোকসান ৭টি ট্রেডের সমান হয়
এটাই সাধারণ গণিত। সিদ্ধান্ত আপনার—শুধু তিন ধাপের (থ্রি নী) মার্টিঙ্গেল নিয়ে ট্রেড করা কতটা লাভজনক হতে পারে। আমার পর্যবেক্ষণ বলে, এটি লাভজনক নয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষাও তাই বলছে। অধিকাংশ নবীন ট্রেডারের সাকসেস রেট ৫০-৫৮% এর কাছাকাছি থাকে, সেক্ষেত্রে ফলাফল আরও খারাপ হবে।
আর বড় সমস্যা হল, সবাই তিন ধাপেই থেমে যেতে পারে না। বেশিরভাগই পুষিয়ে নেওয়ার লোভে আরও এগিয়ে যায়—“হয়তো এবার ভাগ্য খুলল!” তৃতীয় হার বৃদ্ধির পর আসে চতুর্থ, পঞ্চম… সপ্তম… وهكذا যতক্ষণ অ্যাকাউন্টে টাকা আছে।
যে কোনো ট্রেডিং স্ট্রাটেজিতে ৬০% এর বেশি সফল সংকেত থাকলে ফিক্সড রেটে ট্রেড করে আয় করা যায়, তবে তা দিয়ে প্রতিটি ট্রেড লাভে শেষ করা সম্ভব হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। ব্যক্তিগতভাবে, আমি মার্টিঙ্গেল সিস্টেমকে “আগুন নিয়ে খেলা” বলেই মনে করি—“শুধু তিন ধাপ” হোক আর “এই একবারই শেষ,” তবুও এটি বিরাট ঝুঁকি বহন করে।
মার্টিঙ্গেল পদ্ধতির সবকিছুর সঙ্গেই রয়েছে বড় রকমের ঝুঁকি। আমি শুধু আপনাকে সাবধান করতে চাই। আপনারই কাঁধে মাথা—আপনি সিদ্ধান্ত নিন কী করবেন আর কী করবেন না।
বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল সিস্টেমের সুবিধা
মার্টিঙ্গেল সিস্টেম ও হার বৃদ্ধির সুবিধা এক হাতে গোনা যায় (ব্যবহারের পরিসংখ্যানে মনে হয় এটি “মধ্যমা আঙুল”):
- কেবল একটি লাভজনক ট্রেড দিয়ে সমস্ত লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে হার বৃদ্ধি ও মার্টিঙ্গেলের অসুবিধা
কিন্তু হার বৃদ্ধি ও মার্টিঙ্গেলের নেতিবাচক দিক অনেক:
- অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকি
- বড়সড় পরিমাণের আমানত অপরিহার্য
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সব নিয়ম লঙ্ঘন
- ট্রেডিং মনস্তত্ত্বের অবনতি
- ট্রেডিং ডিসিপ্লিনের ঘাটতি
- যে কোনো ট্রেডিং স্ট্রাটেজি ব্যবহার করলেও আমানত হারানোর সম্ভাবনা
- বাইনারি অপশন ব্রোকার ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত কিছু ব্যক্তি হার বৃদ্ধির ব্যাপক প্রচার করে
- সিগন্যাল সরবরাহকারীরা (Signalists) প্রায়ই মার্টিঙ্গেল দিয়ে ট্রেড করতে বাধ্য করে
- কয়েকটি ধাপের (নী) মার্টিঙ্গেল ব্যবহার করাও লাভজনক নয়
- ভবিষ্যতে ট্রেডিংয়ে অনীহা বা বড় ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে
- ট্রেড করার সময় প্রচণ্ড আবেগীয় চাপ
- সুরক্ষিত ও নিশ্চিত লাভের মিথ্যা অনুভূতি
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে মার্টিঙ্গেল পদ্ধতি ব্যবহার করবেন কিনা
আমি লাভজনক অধিকাংশ ট্রেডারের মতের সঙ্গে একমত—বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে মার্টিঙ্গেল সিস্টেমে ট্রেড করা “উচিত নয়।” ঝুঁকির তালিকা দীর্ঘ, আর এই একমাত্র “সব লোকসান পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব” যুক্তিটি এত দুর্বল যে সম্পূর্ণ ছবি পাল্টাতে পারে না। তাছাড়া, মার্টিঙ্গেলকে একটা “মানি ম্যানেজমেন্ট” পদ্ধতি বলাটাই হাস্যকর—কারণ এটি নিজেই ট্রেডারের জন্য বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করে।
আমি কেন বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল ও হার বৃদ্ধি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিই তার মূল কারণগুলো:
- বাইনারি অপশন ব্রোকার এবং পেইড ব্লগাররা মার্টিঙ্গেল সিস্টেম ও হার বৃদ্ধি পদ্ধতির ব্যাপক বিজ্ঞাপন দেয়—এটি বড় সতর্কবার্তা, বিশেষত যখন জানি ব্রোকাররা আমাদের লোকসান থেকেই অর্থ উপার্জন করে
- অভিজ্ঞ ট্রেডাররা ফিক্সড রেট ব্যবহার করে ও নিজেদের ট্রেডিং ব্যালেন্সের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক
- ৯৫% ট্রেডার ধারাবাহিকভাবে আমানত হারায় এবং তারা মূলত মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতেই ট্রেড করে—ওই দলের অংশ না হতে চাইলে তাদের মতো ট্রেড করা যাবে না
- ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা—প্রায় ৩ বছর ধরে মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে আমানত হারিয়েছি। এই সিস্টেম ও হার বৃদ্ধি বাদ দেওয়ার পর ট্রেডিংয়ের মোড় ঘুরে গেছে
- চরম ঝুঁকি ও প্রচণ্ড আবেগীয় চাপে ভোগার চেয়ে শান্তভাবে সামান্য হলেও লাভ করা ভালো। দ্রুত সব হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার দরকার কী?
কিন্তু সর্বত্রই দেখবেন মার্টিঙ্গেল শেখানো হয়। তখন কী করবেন? যত দ্রুত সম্ভব দূরে সরে যান! এইসব “গুরু ট্রেডাররা” আপনাকে যতক্ষণ মগজ ধোলাই করবে, তত টাকা ও স্নায়ু খোয়াবেন। যদি কেউ আপনাকে মার্টিঙ্গেল পদ্ধতিতে ট্রেড শেখাতে চায়, তাহলে হয় তার নিজের মাথা ঠিক নেই বা সে আপনার পকেটে নজর রেখেছে। দ্বিতীয় কোনো কারণ নেই। দুই ক্ষেত্রেই আপনার জন্য ইতিবাচক কিছু নেই!
কীভাবে বাইনারি অপশনে মার্টিঙ্গেল ট্রেডিং বন্ধ করবেন
কঠিন, কিন্তু সম্ভব। আমি পেরেছি—আপনারও সম্ভব! প্রথমে একটা ট্রেডিং ডায়েরি রাখুন ও সেখানে সব ট্রেড লিখে রাখুন। প্রতিদিনের জন্য লক্ষ্য ঠিক করুন—শুধু $১ পরিমাণে (না কম, না বেশি) ট্রেড করবেন। আর নিয়ম ভাঙলে নিজেকে শাস্তি দিন, যেমন গোটা বাড়ি পরিষ্কার করা। দু'একবার করলেই আর ভুল করতে ইচ্ছে করবে না!
$১ পরিমাণের ১০০-২০০টি ট্রেড করুন ও ডায়েরিতে লিখে রাখুন। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০টি ট্রেড করবেন! দেখবেন:
- এতগুলো ট্রেড করার পরও আপনার আমানত শূন্য হয়নি
- হয়তো ট্রেডে লাভও হয়েছে
- ফিক্সড রেটে ট্রেড করায় কোনো ভয় নেই
- মানসিক চাপ অনেক কমে গেছে, ট্রেডিং আরও সহজ লাগছে
- ট্রেড নিয়ে ভীতি দূর হয়েছে
- সঙ্কেত খোঁজার ওপর মনোযোগ আরও বেড়েছে
এই অনুশীলন রিয়েল অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে $১০০ নিয়ে করতে হবে। যদি কখনো আবার নিজেকে অনিরাপদ মনে হয়, এই অনুশীলন পুনরায় করতে দ্বিধা করবেন না—সবসময় নিজের কাছে সৎ থাকুন। একটু সময় বেশি লাগলেও পরবর্তীতে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে ভালো।
হারে বৃদ্ধি পদ্ধতি থেকে ফিক্সড রেটে আসার মূল চালিকাশক্তি হবে আপনার শেখার আগ্রহ আর ইচ্ছা। যত বেশি আপনার আগ্রহ থাকবে, তত দ্রুত নিজেকে ও আপনার ট্রেডিংকে বদলে নিতে পারবেন। সবকিছুই আপনার হাতে। এগিয়ে যান!
মার্টিঙ্গেল সম্পর্কে সর্বশেষ কথা
আমি এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারি সেই সময়গুলি, যখন মার্টিঙ্গেল ও হার বৃদ্ধি ছাড়া ট্রেডিং কল্পনাই করতে পারতাম না। তখন আমি যে কোনো বাইনারি অপশন ব্রোকারের কাছে ১০০% প্রিয় গ্রাহক ছিলাম—বছরের পর বছর কয়েক মিনিটের মধ্যে আমানত শেষ হয়ে যেত। ভাগ্যক্রমে, আমি এই নরকীয় বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে ফিক্সড রেটে স্থিতিশীল ট্রেডিংয়ের দিকে যেতে পেরেছি। সাধারণ এক “বন্দুক হাতে বানর” থেকে, আমি এখন লাভজনক ট্রেডার হয়েছি, যদিও সর্বোত্তম নই (শিখতে এখনো অনেক বাকি), কিন্তু কমপক্ষে আমানত আর হারায় না।
এই প্রবন্ধটি লিখতে আমার ১৮ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। আশা করি আমি আপনাকে বোঝাতে পেরেছি যে মার্টিঙ্গেল পদ্ধতির মাধ্যমে ট্রেড করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, এবং অল্প কয়েকটি সুবিধা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অসুবিধা মিটে যায় না। যারা “গুরু” সেজে এ পদ্ধতির লাভজনক দিক বোঝাচ্ছেন, বা যারা হার বৃদ্ধি দিয়ে ট্রেড করে, অথবা যেখানে ব্রোকাররাই এটি অফার করে—তাদের কথা বিশ্বাস করবেন না। মনে রাখবেন, ৯৫% ট্রেডারই মার্টিঙ্গেল ব্যবহার করে আমানত শেষ করেন—ওই দলের অংশ হবেন না, মাথা খাটিয়ে ট্রেড করুন!
পর্যালোচনা এবং মন্তব্য