বাইনারি অপশন: মৌলিক বিষয় ও আয়ের মূলনীতি (2025)
Updated: 29.04.2025
বাইনারি অপশন ও বাইনারি ট্রেডিং কি (2025)
আজ আমরা আলোচনা করব বাইনারি অপশন কী এবং কেন বর্তমানে এটি এত জনপ্রিয়। পাশাপাশি বাইনারি অপশনের কাজের মূলনীতি বিশ্লেষণ করব।
বাইনারি অপশন মূলত ২০০৮ সাল থেকেই আর্থিক খাতে একটি ট্রেডিং পদ্ধতি হিসেবে চালু আছে। সহজ কথায়, ওই সময় মানুষ ট্রেডিংয়ে লাভ করার জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ কোনো পদ্ধতি খুঁজছিল, কারণ এখনো সাধারণ বাজার ট্রেডিং তুলনামূলক জটিল একটি ক্ষেত্র।
চলুন উদাহরণ দিয়ে দেখি বাইনারি অপশন কীভাবে কাজ করে:
ব্রোকার সাধারণত বিভিন্ন ধরনের অ্যাসেট নির্বাচন করার সুযোগ দেয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারেন্সি পেয়ার (যেমন: EUR/USD, AUD/CAD ইত্যাদি)—অর্থাৎ একটি মুদ্রার অন্য মুদ্রার বিপরীতে মুল্যমান। অনেক সময় ব্রোকাররা মূল্যবান ধাতু, পণ্যদ্রব্য, শেয়ার বা সূচক (Index) ট্রেডের জন্য অফার করে থাকে। আপনি যেকোনো অ্যাসেটে কাজ করতে পারেন। আমাদের উদাহরণে, আমরা AUD/CAD (অস্ট্রেলিয়ান ডলার বনাম কানাডিয়ান ডলার) পেয়ার বেছে নিয়েছি।
ট্রেডার ট্রেডে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে চান, সেটি আগে নির্ধারণ করেন—এটা হলো সেই অর্থের পরিমাণ যা থেকে ভবিষ্যতে লাভ আসবে।
বাইনারি অপশনে লাভ নির্দিষ্ট এবং সাধারণত বিনিয়োগের ৬০% থেকে ৯৮% পর্যন্ত হতে পারে। যদি ট্রেডারের পূর্বাভাস সঠিক হয়, তবে লাভ যুক্ত হবে; যদি ভুল হয়, তবে বিনিয়োগ হারাতে হবে। ট্রেডের লাভের হার আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়—আমাদের উদাহরণে সেটি বিনিয়োগের ৭৭%।
প্রতিটি ট্রেড অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকে—যাকে এক্সপায়ারি টাইম (সময়সীমা) বলা হয়। এই এক্সপায়ারি টাইমও ট্রেডার নিজেই নির্ধারণ করেন। বাইনারি অপশনে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত ট্রেড খোলা রাখা যায়।
আপনার পূর্বাভাস সঠিক হয়েছে? তাহলে আপনি আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ ফেরত পাবেন এবং এর পাশাপাশি ৭৭% (এই উদাহরণে) লাভ যোগ হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি $১০০ বিনিয়োগ করে থাকেন এবং পূর্বাভাস সত্যি হয়, তবে আপনার অ্যাকাউন্টে ফেরত আসবে $১০০ + $৭৭ লাভ।
পূর্বাভাস ভুল হলে কী হবে? সেক্ষেত্রে আপনার $১০০ হারাবেন, অর্থাৎ কেবলমাত্র সেই বিনিয়োগ করা অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এভাবেই ট্রেডিং আগ্রহী মানুষদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ লাভ-ক্ষতি দুই-ই শুরুতেই নির্ধারণ করা যায়। আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেন কতটা বিনিয়োগ করবেন, সঠিক হলে কতটা লাভ পেতে চান, আর যদি আপনি ভুল করেন তবে আপনার ক্ষতির পরিমাণ কতটুকু হবে—সব কিছু আগে থেকেই পরিষ্কার থাকে।
মূলত ট্রেডারের কাজ হলো দাম কোন দিকে যাচ্ছে, তা বুঝে সঠিক সময়ে ট্রেডের এক্সপায়ারি সেট করা। উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক।
ধরুন, কোনো কারণে খবরে এলো যে মার্কিন ডলার ধাপে ধাপে দুর্বল হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে ট্রেডারের করণীয় হতে পারে:
বাইনারি অপশনে আরেকটি বড় সুবিধা হলো, ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনেও লাভ করা যায়। মূল্য যদি মাত্র ১ পয়েন্ট কমেও আপনার পছন্দের দিকে যায়, সেটাও লাভের জন্য যথেষ্ট।
যেমন, যদি ওপরে বর্ণিত একই উদাহরণে ট্রেড ওপেন হয় “1.33759” তে, আর ক্লোজ হয় “1.33758” তে—এ ক্ষেত্রেও পূর্বাভাস সঠিক হওয়ায় ট্রেডার ৭৭% লাভ পাবেন।
অনেক ব্রোকারের নিয়ম অনুযায়ী, যদি ট্রেডের শেষের সময়ে মূল্য ঠিক ওপেন করার স্তরে থাকে, তাহলে ট্রেডার কোনো ক্ষতি করেন না—তার বিনিয়োগ তাকে ফেরত দেওয়া হয়।
সাধারণত নতুন ট্রেডারেরাই সংখ্যায় বেশি, কারণ বাইনারি অপশন তুলনামূলক সহজে শেখা যায়—যেমন ফরেক্স বা অন্য আর্থিক উপকরণের তুলনায় এখানে প্রক্রিয়া সরল।
এছাড়াও প্রযুক্তিগতভাবে এখানে হাতেখড়ি নেওয়া বেশ সহজ: দিক নির্ধারণে মাত্র দুটি বোতাম (Above/Below), আর অ্যাসেট, এক্সপায়ারি সময় ও বিনিয়োগের পরিমাণ নির্বাচনের জন্য অল্প কিছু অপশন থাকে—৫-১০টি ট্রেড করলেই বেশিরভাগ মানুষ বোঝে কীভাবে কাজ করতে হয়।
কিন্তু সহজলভ্যতা আর সরল কাঠামোর আড়ালে প্রকৃতপক্ষে একটি কঠিন পেশাগত ক্ষেত্র আছে। ধারাবাহিকভাবে লাভজনক হতে গেলে এমন কিছু দক্ষতা আর জ্ঞান দরকার যা দৈনন্দিন জীবনে আমরা সাধারণত শিখি না।
শুরুর দিকে হয়তো ব্যাপারটি বুঝে উঠতে সময় লাগবে না, কিন্তু অল্প দিনেই টের পাবেন যে সবকিছু অতটা সহজ নয়। এই প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্দেশ্যই হলো আপনার জ্ঞানঘাটতি পূরণ করা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাইনারি অপশন ব্রোকাররা আপনার ট্রেড বাস্তব মার্কেটে নিয়ে যায় না—অর্থাৎ আপনি যদি কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন, তাতেও বাস্তব বাজারে মূল্য ওঠানামায় প্রভাব পড়ে না। ব্রোকার মূলত রিয়েল-টাইম মূল্যচিত্র দেখিয়ে দেয়, কিন্তু সেই ট্রেডের লেনদেন চলে ব্রোকারের প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই।
এই ব্যবস্থায় দাম কোথায় যাবে সেটি অনেকটা পূর্বাভাসের মতো—আপনি ঠিক বললে ব্রোকার আপনাকে আপনার মুনাফা দিয়ে দেয়, ভুল হলে আপনার বিনিয়োগ ব্রোকারের কাছে থেকে যায়।
দুর্ভাগ্যবশত, পরিসংখ্যান বলে প্রায় ৯৫% নতুন ট্রেডার নিয়মিতভাবে ভুল পূর্বাভাস দিয়ে ব্রোকারকে লাভবান করে। সুতরাং যদি আপনি ভাবেন “খুব দক্ষ হলে কি ব্রোকারকে গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব?”, উত্তর হলো “না,” কারণ অগণিত নতুন ট্রেডারদের ভুলে ব্রোকার বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে।
তাহলে কি ট্রেডারদের পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব। আপনার লক্ষ্য হলো ওই ৫% সফল ট্রেডারের দলে ঢোকা, যাদের নিয়মিত লাভ ফি-বাবদ ব্রোকারকেই দিতে হয়।
অর্থাৎ আপনি যদি দক্ষ ট্রেডার হন, তাহলে ব্রোকারের বিশাল আয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়মিত আপনার পকেটে চলে আসে। ব্রোকাররা সাধারণত এটি নিয়ে কখনোই বড় সমস্যা করে না, কারণ সেই পরিমাণটা তাদের মোট আয়ের তুলনায় নগণ্য।
নতুন কেউ যদি এটি ব্যাখ্যা করে, সে বলবে, “দাম বাড়বে না কমবে, শুধু সেটা বোঝার চেষ্টা করলেই হলো।” কিন্তু অভিজ্ঞ কেউ ব্যাখ্যা করলে বলবেন, “যতটা সহজ বলে মনে হয়, পেশাদার পর্যায়ে লাভজনক হতে আমাকে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।”
কেন এমন পার্থক্য? কারণ অর্থ উপার্জনের জন্য কোনো আর্থিক উপকরণে ঢুকতে হলে আপনাকে তার মৌলিক ও টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানতে হবে। কিন্তু অনেক ব্রোকারের বিজ্ঞাপনে বাইনারি অপশনকে “খুব সহজে প্রচুর আয়” করার সুযোগ হিসেবে তুলে ধরা হয়—যেন কিছু বোতাম চাপলেই হলো।
আগেও বলেছি, এটিকে “সবকিছু অথবা কিছুই নয়” বলা হয়—এই দুই ফলাফলের মধ্যে যেকোনো একটিই ঘটবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাইনারি অপশন ২০০৮-এর আগে থেকেই অন্য রূপে বিদ্যমান ছিল, যদিও তখন এটির কাঠামো ও নাম ভিন্ন ছিল। ব্রোকাররা বহু বছর ধরে মূল্যের দিকে বাজি (Bet) ধরার ব্যবস্থা চালু রেখেছিল, যা এই আধুনিক বাইনারি অপশনেরই পুরোনো রূপ।
ব্রোকাররা এই পণ্যটি উন্নত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে—এবং সেটা স্পষ্টতই লাভজনক বলেই করছে। কাজেই ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া’র মতো কোনো আলামত এখনো নেই।
অবশ্য ২০০৮ সালের পর থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে, প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। কিন্তু এখনো যারা সময়মতো সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারেন, তারা ধারাবাহিকভাবে এতে লাভ করছেন।
বরং ব্রোকাররা এখন গ্রাহকদের বেশি সন্তুষ্ট করতে নানা ধরনের নতুন অপশন, উচ্চতর পেআউট ও সুবিধা দিচ্ছে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এটা তাদের জন্য লাভজনক ব্যবসা, এবং এটা আরও অনেক দূর এগোবে বলে মনে হয়।
অনেক দেশে হয়তো কিছু সীমাবদ্ধতা বা নিষেধাজ্ঞা আছে, কিন্তু ব্যস্ত বাজারে রয়েছে এমন ব্রোকার যারা এসব নিষেধাজ্ঞার বাইরে—সুতরাং যারা ট্রেড করতে আগ্রহী তারা ঠিকই ট্রেড করতে পারছেন। এমনকি প্রয়োজনে ব্রোকাররা সবসময় নতুন ধরনের অপশন চালু করে দেয়, যা কোনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। এই খাত তাই সহজে বন্ধ হওয়ার নয়।
সুতরাং আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, গত শতকের শেষভাগে যে ধারণাগত ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, এই শতকেও সেটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা কম।
বাইনারি অপশন মূলত ২০০৮ সাল থেকেই আর্থিক খাতে একটি ট্রেডিং পদ্ধতি হিসেবে চালু আছে। সহজ কথায়, ওই সময় মানুষ ট্রেডিংয়ে লাভ করার জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ কোনো পদ্ধতি খুঁজছিল, কারণ এখনো সাধারণ বাজার ট্রেডিং তুলনামূলক জটিল একটি ক্ষেত্র।
সুচিপত্র
- বাইনারি অপশন কীভাবে কাজ করে?
- বাইনারি অপশনে ট্রেড কীভাবে কার্যকর হয়?
- বাইনারি অপশন থেকে কীভাবে আয় করা যায়?
- কে বাইনারি অপশন ট্রেড করতে পারে?
- কারা বাইনারি অপশন প্রয়োজনীয় মনে করে এবং কে আসলে লাভ করে?
- বাইনারি অপশনের "সহজতা" ঠিক কোথায়?
- “বাইনারি” বলতে কী বোঝায়?
- বাইনারি অপশন কি শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে?
- প্রাথমিক পদক্ষেপ
বাইনারি অপশন কীভাবে কাজ করে?
বাইনারি অপশন বা “সবকিছু অথবা কিছুই নয়” হলো এমন একটি আর্থিক লেনদেন যা ব্রোকার এবং ক্লায়েন্ট (ট্রেডার) এর মধ্যে সম্পন্ন হয়। এখানে ট্রেডারকে নির্দিষ্ট সময় পর অ্যাসেটের (যেমন মুদ্রা, শেয়ার ইত্যাদি) মূল্য বাড়বে নাকি কমবে—সে সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে হয়। পূর্বাভাস সঠিক হলে ট্রেডার একটি নির্দিষ্ট মুনাফা পান, আর পূর্বাভাস ভুল হলে বিনিয়োগ করা অর্থ হারান। এই জন্যই একে বলা হয় “সবকিছু অথবা কিছুই নয়” বা বাইনারি অপশন।চলুন উদাহরণ দিয়ে দেখি বাইনারি অপশন কীভাবে কাজ করে:
ব্রোকার সাধারণত বিভিন্ন ধরনের অ্যাসেট নির্বাচন করার সুযোগ দেয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারেন্সি পেয়ার (যেমন: EUR/USD, AUD/CAD ইত্যাদি)—অর্থাৎ একটি মুদ্রার অন্য মুদ্রার বিপরীতে মুল্যমান। অনেক সময় ব্রোকাররা মূল্যবান ধাতু, পণ্যদ্রব্য, শেয়ার বা সূচক (Index) ট্রেডের জন্য অফার করে থাকে। আপনি যেকোনো অ্যাসেটে কাজ করতে পারেন। আমাদের উদাহরণে, আমরা AUD/CAD (অস্ট্রেলিয়ান ডলার বনাম কানাডিয়ান ডলার) পেয়ার বেছে নিয়েছি।
ট্রেডার ট্রেডে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে চান, সেটি আগে নির্ধারণ করেন—এটা হলো সেই অর্থের পরিমাণ যা থেকে ভবিষ্যতে লাভ আসবে।
বাইনারি অপশনে লাভ নির্দিষ্ট এবং সাধারণত বিনিয়োগের ৬০% থেকে ৯৮% পর্যন্ত হতে পারে। যদি ট্রেডারের পূর্বাভাস সঠিক হয়, তবে লাভ যুক্ত হবে; যদি ভুল হয়, তবে বিনিয়োগ হারাতে হবে। ট্রেডের লাভের হার আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়—আমাদের উদাহরণে সেটি বিনিয়োগের ৭৭%।
প্রতিটি ট্রেড অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকে—যাকে এক্সপায়ারি টাইম (সময়সীমা) বলা হয়। এই এক্সপায়ারি টাইমও ট্রেডার নিজেই নির্ধারণ করেন। বাইনারি অপশনে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত ট্রেড খোলা রাখা যায়।
বাইনারি অপশনে ট্রেড কীভাবে কার্যকর হয়?
ট্রেডারের কাজ হলো, নির্দিষ্ট সময় পর সম্পদের মূল্য কোথায় থাকবে—এর বর্তমান মূল্য থেকে উপরে নাকি নিচে—তা অনুমান করা। সাধারণত ট্রেড খোলার জন্য দু’টি বোতাম থাকে: “Above (CALL)” এবং “Below (PUT)”।
আপনার পূর্বাভাস সঠিক হয়েছে? তাহলে আপনি আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ ফেরত পাবেন এবং এর পাশাপাশি ৭৭% (এই উদাহরণে) লাভ যোগ হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি $১০০ বিনিয়োগ করে থাকেন এবং পূর্বাভাস সত্যি হয়, তবে আপনার অ্যাকাউন্টে ফেরত আসবে $১০০ + $৭৭ লাভ।
পূর্বাভাস ভুল হলে কী হবে? সেক্ষেত্রে আপনার $১০০ হারাবেন, অর্থাৎ কেবলমাত্র সেই বিনিয়োগ করা অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এভাবেই ট্রেডিং আগ্রহী মানুষদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ লাভ-ক্ষতি দুই-ই শুরুতেই নির্ধারণ করা যায়। আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেন কতটা বিনিয়োগ করবেন, সঠিক হলে কতটা লাভ পেতে চান, আর যদি আপনি ভুল করেন তবে আপনার ক্ষতির পরিমাণ কতটুকু হবে—সব কিছু আগে থেকেই পরিষ্কার থাকে।
বাইনারি অপশন থেকে কীভাবে আয় করা যায়?
আগেই বোঝা গেছে, বাইনারি অপশন থেকে লাভ করতে চাইলে আপনাকে ৫৮-৬০% বা তার বেশি ট্রেডে সঠিক হতে হবে—যেখানে মূল্য কোন দিকে যাবে, সেটা নির্ধারণ আপনাকেই করতে হবে।মূলত ট্রেডারের কাজ হলো দাম কোন দিকে যাচ্ছে, তা বুঝে সঠিক সময়ে ট্রেডের এক্সপায়ারি সেট করা। উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক।
ধরুন, কোনো কারণে খবরে এলো যে মার্কিন ডলার ধাপে ধাপে দুর্বল হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে ট্রেডারের করণীয় হতে পারে:
- উদাহরণস্বরূপ, USD-এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি পেয়ার খুঁজে বের করা: EUR/USD, USD/JPY, USD/CAD ইত্যাদি।
- যেহেতু ডলার দুর্বল হচ্ছে, তাই যেখানে ডলার প্রথমে থাকে (যেমন USD/CAD), সেখানে দাম পড়বে বলে আশা করা যায়, আর যেখানে ডলার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকে (যেমন EUR/USD), সেখানে দাম বাড়তে পারে।
- ট্রেডার এক্সপায়ারি টাইম নির্বাচন করে USD/CAD-এ ডাউন ট্রেড (PUT) বা EUR/USD-এ আপ ট্রেড (CALL) খুলে অপেক্ষা করবেন।
বাইনারি অপশনে আরেকটি বড় সুবিধা হলো, ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনেও লাভ করা যায়। মূল্য যদি মাত্র ১ পয়েন্ট কমেও আপনার পছন্দের দিকে যায়, সেটাও লাভের জন্য যথেষ্ট।
যেমন, যদি ওপরে বর্ণিত একই উদাহরণে ট্রেড ওপেন হয় “1.33759” তে, আর ক্লোজ হয় “1.33758” তে—এ ক্ষেত্রেও পূর্বাভাস সঠিক হওয়ায় ট্রেডার ৭৭% লাভ পাবেন।
অনেক ব্রোকারের নিয়ম অনুযায়ী, যদি ট্রেডের শেষের সময়ে মূল্য ঠিক ওপেন করার স্তরে থাকে, তাহলে ট্রেডার কোনো ক্ষতি করেন না—তার বিনিয়োগ তাকে ফেরত দেওয়া হয়।
কে বাইনারি অপশন ট্রেড করতে পারে?
আরো একটি বড় সুবিধা হলো, খুব কম পরিমাণ মূলধন দিয়েও বাইনারি অপশনে ট্রেড শুরু করা যায়। কিছু ব্রোকার মাত্র $৫–১০ ডিপোজিটে শুরু করার সুযোগ দেয়, এবং ট্রেড খুলতে এক ডলার বা স্থানীয় মুদ্রার সমপরিমাণই যথেষ্ট।সাধারণত নতুন ট্রেডারেরাই সংখ্যায় বেশি, কারণ বাইনারি অপশন তুলনামূলক সহজে শেখা যায়—যেমন ফরেক্স বা অন্য আর্থিক উপকরণের তুলনায় এখানে প্রক্রিয়া সরল।
এছাড়াও প্রযুক্তিগতভাবে এখানে হাতেখড়ি নেওয়া বেশ সহজ: দিক নির্ধারণে মাত্র দুটি বোতাম (Above/Below), আর অ্যাসেট, এক্সপায়ারি সময় ও বিনিয়োগের পরিমাণ নির্বাচনের জন্য অল্প কিছু অপশন থাকে—৫-১০টি ট্রেড করলেই বেশিরভাগ মানুষ বোঝে কীভাবে কাজ করতে হয়।
কিন্তু সহজলভ্যতা আর সরল কাঠামোর আড়ালে প্রকৃতপক্ষে একটি কঠিন পেশাগত ক্ষেত্র আছে। ধারাবাহিকভাবে লাভজনক হতে গেলে এমন কিছু দক্ষতা আর জ্ঞান দরকার যা দৈনন্দিন জীবনে আমরা সাধারণত শিখি না।
শুরুর দিকে হয়তো ব্যাপারটি বুঝে উঠতে সময় লাগবে না, কিন্তু অল্প দিনেই টের পাবেন যে সবকিছু অতটা সহজ নয়। এই প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্দেশ্যই হলো আপনার জ্ঞানঘাটতি পূরণ করা।
কারা বাইনারি অপশন প্রয়োজনীয় মনে করে এবং কে আসলে লাভ করে?
যদি মনে করেন যে কেবল ট্রেডাররাই বাইনারি অপশন থেকে উপকৃত হয়, তাহলে সেটি পুরো সত্য নয়। “সবকিছু অথবা কিছুই নয়” এই নীতিতে তৈরি বাইনারি অপশনে যখন ট্রেডার হারেন, কেউ না কেউ সেটার থেকে লাভ পায়।অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাইনারি অপশন ব্রোকাররা আপনার ট্রেড বাস্তব মার্কেটে নিয়ে যায় না—অর্থাৎ আপনি যদি কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন, তাতেও বাস্তব বাজারে মূল্য ওঠানামায় প্রভাব পড়ে না। ব্রোকার মূলত রিয়েল-টাইম মূল্যচিত্র দেখিয়ে দেয়, কিন্তু সেই ট্রেডের লেনদেন চলে ব্রোকারের প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই।
এই ব্যবস্থায় দাম কোথায় যাবে সেটি অনেকটা পূর্বাভাসের মতো—আপনি ঠিক বললে ব্রোকার আপনাকে আপনার মুনাফা দিয়ে দেয়, ভুল হলে আপনার বিনিয়োগ ব্রোকারের কাছে থেকে যায়।
দুর্ভাগ্যবশত, পরিসংখ্যান বলে প্রায় ৯৫% নতুন ট্রেডার নিয়মিতভাবে ভুল পূর্বাভাস দিয়ে ব্রোকারকে লাভবান করে। সুতরাং যদি আপনি ভাবেন “খুব দক্ষ হলে কি ব্রোকারকে গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব?”, উত্তর হলো “না,” কারণ অগণিত নতুন ট্রেডারদের ভুলে ব্রোকার বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে।
তাহলে কি ট্রেডারদের পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব। আপনার লক্ষ্য হলো ওই ৫% সফল ট্রেডারের দলে ঢোকা, যাদের নিয়মিত লাভ ফি-বাবদ ব্রোকারকেই দিতে হয়।
অর্থাৎ আপনি যদি দক্ষ ট্রেডার হন, তাহলে ব্রোকারের বিশাল আয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়মিত আপনার পকেটে চলে আসে। ব্রোকাররা সাধারণত এটি নিয়ে কখনোই বড় সমস্যা করে না, কারণ সেই পরিমাণটা তাদের মোট আয়ের তুলনায় নগণ্য।
বাইনারি অপশনের "সহজতা" ঠিক কোথায়?
সংক্ষেপে বললে, আপনি দুটি বোতাম (Above / Below) দেখতে পান যা বাইনারি অপশনের মূলভাবকে প্রকাশ করে। বাইরে থেকে দেখলে খুবই সহজ মনে হয়, কিন্তু বাস্তবে কী?নতুন কেউ যদি এটি ব্যাখ্যা করে, সে বলবে, “দাম বাড়বে না কমবে, শুধু সেটা বোঝার চেষ্টা করলেই হলো।” কিন্তু অভিজ্ঞ কেউ ব্যাখ্যা করলে বলবেন, “যতটা সহজ বলে মনে হয়, পেশাদার পর্যায়ে লাভজনক হতে আমাকে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।”
কেন এমন পার্থক্য? কারণ অর্থ উপার্জনের জন্য কোনো আর্থিক উপকরণে ঢুকতে হলে আপনাকে তার মৌলিক ও টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানতে হবে। কিন্তু অনেক ব্রোকারের বিজ্ঞাপনে বাইনারি অপশনকে “খুব সহজে প্রচুর আয়” করার সুযোগ হিসেবে তুলে ধরা হয়—যেন কিছু বোতাম চাপলেই হলো।
“বাইনারি” বলতে কী বোঝায়?
“বাইনারি” শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে যে ধারণা আসে—দুইটি সম্ভাবনা—সেটাই এখানে মূল ব্যাপার। আসলে, দুটি ফলাফলের কথা বলা হয়েছে: সঠিক অনুমান করলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা পাবেন, আর ভুল হলে বিনিয়োগকৃত অর্থ হারাবেন।আগেও বলেছি, এটিকে “সবকিছু অথবা কিছুই নয়” বলা হয়—এই দুই ফলাফলের মধ্যে যেকোনো একটিই ঘটবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাইনারি অপশন ২০০৮-এর আগে থেকেই অন্য রূপে বিদ্যমান ছিল, যদিও তখন এটির কাঠামো ও নাম ভিন্ন ছিল। ব্রোকাররা বহু বছর ধরে মূল্যের দিকে বাজি (Bet) ধরার ব্যবস্থা চালু রেখেছিল, যা এই আধুনিক বাইনারি অপশনেরই পুরোনো রূপ।
বাইনারি অপশন কি শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে?
প্রতিটি বছরেই কেউ না কেউ বলেন যে বাইনারি অপশন আর বেশিদিন থাকবে না। ২০০৮ সালে যেমন কথাগুলো উঠেছিল, ২০১৮ তেও উঠেছিল—কিন্তু এখনো বাইনারি অপশন টিকে আছে।ব্রোকাররা এই পণ্যটি উন্নত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে—এবং সেটা স্পষ্টতই লাভজনক বলেই করছে। কাজেই ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া’র মতো কোনো আলামত এখনো নেই।
অবশ্য ২০০৮ সালের পর থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে, প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। কিন্তু এখনো যারা সময়মতো সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারেন, তারা ধারাবাহিকভাবে এতে লাভ করছেন।
বরং ব্রোকাররা এখন গ্রাহকদের বেশি সন্তুষ্ট করতে নানা ধরনের নতুন অপশন, উচ্চতর পেআউট ও সুবিধা দিচ্ছে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এটা তাদের জন্য লাভজনক ব্যবসা, এবং এটা আরও অনেক দূর এগোবে বলে মনে হয়।
অনেক দেশে হয়তো কিছু সীমাবদ্ধতা বা নিষেধাজ্ঞা আছে, কিন্তু ব্যস্ত বাজারে রয়েছে এমন ব্রোকার যারা এসব নিষেধাজ্ঞার বাইরে—সুতরাং যারা ট্রেড করতে আগ্রহী তারা ঠিকই ট্রেড করতে পারছেন। এমনকি প্রয়োজনে ব্রোকাররা সবসময় নতুন ধরনের অপশন চালু করে দেয়, যা কোনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। এই খাত তাই সহজে বন্ধ হওয়ার নয়।
সুতরাং আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, গত শতকের শেষভাগে যে ধারণাগত ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, এই শতকেও সেটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা কম।
পর্যালোচনা এবং মন্তব্য